ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাসচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি: আশাশুনির হাটবাজারের প্রতিটি ডিপোতে অবাধে চলছে চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ। চিংড়ির ওজন বাড়াতে ব্যবসায়ীরা এ কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। পুশ করা এসব গলদা-বাগদা প্রকাশ্যে কোম্পানীতে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকবার পুশ বিরোধী অভিযানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে জরিমানা আদায় ও বিপুল পরিমান চিংড়ি বিনষ্ট করা হলেও থেমে নেই এসব কর্মকান্ড। তবে পুশ রোধে মাছ কোম্পানীসহ ডিপোগুলিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান আরো জোরদার করার জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, আশাশুনিতে ছোটবড় হাটবাজারে ঘের সংলগ্ন এলাকায় ঘের থেকে চিংড়ী ক্রয়ের প্রতিষ্ঠান রয়েছে।আর এ সকল প্রতিষ্ঠান হাট বাজারে অবস্থিত মাছের ডিপোয় ভেজালযুক্ত চিংড়ী মাছ সরবরাহ করে। এরা মোকাম থেকে আসা বাগদা ও গলদা চিংড়ি প্রসেসিং করে মাছ কোম্পানীতে সরবরাহ করে। প্রোসেসিং এর মধ্যে অন্যতম কাজ হচ্ছে ওজন বাড়াতে চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ করা। এ কাজ করার জন্য প্রতিটি ডিপোর রয়েছে গোপন কক্ষ। আর কর্মরত রয়েছে এক শ্রেনীর শ্রমিক। এদের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়। এরা ডাক্তার নামে পরিচিত। কথিত এই ডাক্তারদের পুশ করা বাবদ কেজি প্রতি বাগদা হার্ডপুশ ৫০ টাকা, মধ্যম ২৫ টাকা ও হালকা ৩০ টাকা এবং গলদা হার্ডপুশ একশ’ টাকা, মধ্যম ৬০ টাকা ও হালকা ৩০ থেকে ২৫ টাকা দিতে হয়। সূত্র জানায়, ্এক কেজি গলদা চিংড়ি হার্ড পুশ করলে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম, মধ্যম ২৫ থেকে ৩০ গ্রাম ও হালকা ১৫ থেকে ২০ গ্রাম এবং বাগদা হার্ড পুশ করলে কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৩৫ গ্রাম, মধ্যম ১৮ থেকে ২২ গ্রাম ও হালকা ১০ থেকে ১৫ গ্রাম বৃদ্ধি পায়। আর এ কাজগুলো মুলত মহিষকুড়, মাড়িয়ালা, ঘোলা, শ্রীউলা, কাদাকাটি, গুনাকরকাটি পুঁইজালা, বুধহাটা, মহেশ্বরকাটি, বসুখালি, কামালকাটি, বদরতালা, সরাপপুর, কুল্যা, হাজীর হাটখোলা, গাবতলা, মহিষাডঙ্গিা, গুনাকরকাটি ব্রীজ সংলগ্ন, কাদাকাটির টেংরাখালি, তেঁতুলিয়া বাজর, করচাখালি, যদুয়ারডাঙ্গা, দরগাপুর, খরিয়াটিবাজা, শ্রীধরপুর, হাড়িভাঙ্গা, তুয়ারডাঙ্গা, কাপসন্ডা, কাকবাসিয়, আনুলিয়া এলাকায় অবস্থিত ডিপো গুলোতে চলছে এ পুশ কার্যক্রম। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সাতক্ষীরা, খুলনার বাজার থেকে ক্রয় করে আনা জেলি পাউডার পানিতে জ¦ালিয়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মাধ্যমে তা চিংড়ির দেহে প্রবেশ করানো হয়। পাশ্ববর্তী মোকামেও চিংড়িতে পুশ করানো হচ্ছে বলে একাধীক সূত্র জানায়। পুশ করা বাগদা ও গলদা খুলনা ও যশোরে হিমায়িত চিংড়ি ফ্যাক্টরীতে সরবরাহ করছে ব্যবসায়ীরা। ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষ পুশ করা চিংড়ি খরিদ করা হয়না বলে প্রচার করলেও মূলত পুশ ছাড়া কোন চিংড়ি তারা রিসিভ করেন না বলে একাধিক সূত্র জানায়। ফ্যাক্টরীতে এসব চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে। এসব ডিপো থেকে সাংবাদিক নামধারী কিছু ব্যক্তি মাসো হারা নিয়ে পুশ কার্যক্রম কে উৎসাহ যোগাচ্ছে বলে জানা গেছে।আর এ পুশ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর।কিন্ত অজ্ঞত কারনে তিনি নিরব ভূমিকা পালন করছেন। পুশকৃত চিংড়ি বোঝার উপায় সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বাভাবিক চিংড়ির হাত-পা কুঁকড়ে থাকে, কিন্তু পুশকৃত চিংড়ির হাত-পা ছড়িয়ে থাকে। বাইরে থেকে পুশকৃত চিংড়ি দেখতে একটু মোটা হয়, চিংড়ির গায়ে একটা টনটন ভাব থাকে। এছাড়া চিংড়ির মাথা ভেঙ্গে দেহের অংশে চাপ দিলে পুশকৃত চিংড়ি থেকে পানি বেরিয়ে আসে, জেলি পুশ করা চিংড়ি থেকে একটা পিচ্ছিল পদার্থ বেরিয়ে আসে। চিংড়ীতে পুশ কিনা বুঝতে হলে, চিংড়ির পেছনের নালীর বরাবর কলম বা চাবি দিয়ে কেটে ফেলতে হবে, তারপর দেহের অংশে চাপ দিলে পানি পুশ বা জেলি পুশ যাই থাকে সেটা বেরিয়ে আসে। পানি পুশ হলে পিচ্ছিল পানি বেড়িয়ে আসে। জেলি পুশ হলে পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। আজকাল আগার জাতীয় জেলি পুশে ব্যবহার করা হচ্ছে। চিংড়িতে আগার পুশ করলে সেটা ভেতরে গিয়ে চিংড়ির মাংসের মতো শক্ত হয়ে থাকে। মাথা ভেঙ্গে দেহের অংশে চাপ দিলে একটা শক্ত সুতার মতো পদার্থ বেরিয়ে আসে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী অপদ্রব পুশ করার কথা স্বীকার করে বলেন, পুশ করার মূল হোতা কোম্পানী মালিকরা। তারা পুশ করা চিংড়ি খরিদে সতর্ক হলে বা এ চিংড়ি ক্রয় না করার জন্য কঠোর অবস্থান নিলে কোন ব্যবসায়ী চিংড়িতে পুশ করতো না। তিনি বলেন পুশ বিরোধী অভিযানে কোম্পানী মালিকরা থাকে ধরা ছোয়ার বাইরে। আর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান শুনেছি পুশ হচ্ছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রনে আনার। সুধী মহল মনে করেন স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট জোরদার ও পাশাপাশি ফ্যাক্টারির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলে ফিরে আসতে পারে চিংড়ীর অতীত দিন।