
আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ: জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে হামলার পর মামলা। ঘটনাস্থল থেকে ১৫ কি.মি. দূরে কোর্টে অবস্থান করলে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে রাসেলকে করা হয়েছে মামলার প্রধান আসামী। এ নিয়ে সরগরম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়নের কামার বায়সা।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা ইউনিয়নের কামার বায়সা গ্রামের আব্দুল গণির পাওনা আধা শতক জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো মোঃ তরিকুল ইসলামের সাথে। নিজেদের গোষ্ঠির মধ্যে হওয়ায় এজমালিতে গণির পাওনা জমির পাশের জমি যেটা গণির জমির সোজাসুজি অবস্থিত সেখান থেকে দিতে চান তরিকুল। এ বিষয়ে শুক্রবার একটি শালিষি বৈঠক হয়। কিন্তু সেখান থেকে না নিয়ে তিনি ওই জায়গা থেকেই নিবেন বলে গোয়ার্তুমি করেন। স্থানীয়দের শালিস না মেনে তিনি চলে যান। পরের রবিবার তিনি দুপুরে কাউকে কিছু না জানিয়ে ওই জমিতে পাঁচিল দিতে যান। তরিুকুলরা বাধা দিলে তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে আব্দুল গণির নিয়োজিত সন্ত্রাসীরা। তার ভাড়াটে সস্ত্রাসীরা হামলার সময় নিজেদের অস্ত্রে নিজেরাই আহত হয়। এ নিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় নিজে বাদি বা স্বাক্ষি না হয়ে মোজাম্মেল হক নামের এক ব্যাক্তির দ্বারা আব্দুল গণি মামলা করান। যার নম্বর ৫৫/৮৬৭, তারিখ ২৩ নভেম্বর, ২০। তবে মামলায় হয়রাণি মূলকভাবে একাধিক ব্যক্তির নাম জড়ান গণি ও মোজাম্মেল। মামলার প্রথম আসামী করেন সাতক্ষীরা জর্জ কোর্টের পিপি আব্দুল লতিফের ছেলে আমিনুল হক রাসেলকে। অথচ ২২শে নভেম্বর প্রধামন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধী দলিয় নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলার সাক্ষ্য গহণের দিন ছিল। এ সময় রাসেল বাবার সাথেই কোর্টে ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে পিপি আব্দুল লতিফের প্রতিপক্ষ তাকে ও তার পরিবারের সম্মান ক্ষুন্ন ও হেয় করতে রাসেলকে মামলার প্রধান আসামী করেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাসিনা খাতুন জানান, “আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার ছেলে ও স্বামী বাজারে দোকান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। জমি মাপ দেওয়ার পর গনি বলে যে এই জমির খুটা পর্যন্ত আমাদের। গনিদের পাওয়ান পুকুর পর্যন্ত। কিন্তু এই জমি ওরা বেশি করে নিবে। হঠাৎ দুপুরের সময় গনি ২০/২৫ জন লোক নিয়ে আসে ওই জমিতে ভিট কাটার জন্য। এ সময় আমি বলি, এই দুপুরের সময় কাউকে কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে ভিত কাটতে আসার কারণ কি। এখন হুট করে পথের উপর ভিত কাটলে আমরা চলাচল করব কি করে। জমি যদি তোমাদের কাগজে থাকে তাহলে তোমরা নিবে। হুমকি ধামকি দেওয়ার দরকার কি। এসময় আব্দুল গনির নেতৃত্বে মজনু, তোতা, আনার, মনি, আরিজুল আমাদের বাড়িতে হামলা করে। এসময় গণি চিৎকার করে বলে ‘আমার টাকা আছে, তোরা যা পারিস কর, যত লাগে আমি খরচ করব। তোরা ওদের মাটিতে মিশিয়ে দে।’ এসময় ওরা বাড়ির মধ্যে এসে ও রাস্তা থেকে ইট-পাথর মারতে থাকে। এসময় আমার ঘরের এলবেস্টারের চাল ও খোলার চাল ভেঙে যায়।” পিপি আব্দুল লতিফের ছেলে আমিনুল হক রাসেল হামলায় অংশ নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাসিনা খাতুন জানান, রাসেলতো কোর্টে ছিল। এখানে ছিলনা।’
হামলার ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মনজুরুল ইসলাম জানান, “এখানে ৮ শতক জমি পায় গণি। এখন যে ওই জমির উপর আছে সে বলে আমিতো এখানে ঘর করেছি। তুমি পশ্চিম পাশ থেকে ওই জমি নাও। তাহলে তোমার জমিও একটি সুন্দর ও সোজা প্লট হবে। আর এখান দিয়ে আমাদের রাস্তা আছে। এখান থেকে জমি নিতে গেলে আমার ঘর ভাঙা পড়বে। গণি তখন বলে ‘আমার জায়গা আমি দখল করবো।’ তখন আমি বলি আমরা শত শত লোক এখান দিয়ে মাঠে চলাচল করি। তুমি পাশের জমি থেকে জায়গা নাও। এখান থেকে নিলে আমরা মাঠে যাব কেমনে। তখন গনি বলে ‘ কে কোথা দিয়ে যাব তা আমার দেখার বিষয় না। আমি এখান দিয়ে ঘিরে দেব।’ এ কথা বলে এখানে একটু হাতাহাতি করে চলে যায়। যাওয়ার সময় গণি ভাড়র করা লোক দ্বারা বাড়ি ঘেরাও করে রাস্তা থেকে ইট-পাথর মেরে আমাদের ঘরবাড়ির চাল ভেঙে দিয়ে যায়। নিজেদের ছোড়া ইটের আঘাতে ওরা আহত হয়।” তবে আব্দুল গণির শক্তির উৎস জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আব্দুল গনি এক সময়ের আদম ব্যবসায়ী। হাজার হাজার নারী পাচার করেছে মধ্যপ্রাচ্যে। তার বিরুদ্ধে এলাকায় একাধিক ধর্ষণের অভিযোগও আছে। এ ছাড়াও নিজ বোনকেও শ্লীলতাহানী করে গণি।” পিপি আব্দুল লতিফের ছেলে আমিনুল হক রাসেল হামলায় অংশ নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মিঃ মনজুরুল বলেন, হামলার ঘটনার দিন রাসেল শহরে কোর্টে ছিল।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধরাণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জানান, “প্রথমে এখানে দুই জন আমিন দিয়ে মাপা হয়। আমরা স্থানীয়রা এ সময় শালিশে ছিলাম। ঐ দিন কোন সমস্যা হয় নি। এখানে যে জায়গা নিয়ে গোলযোগ সে জায়গায় ৮ শতক জায়গা গনি পায়। তবে যিনি এ জায়গায় আছেন তিনি গনির জমির লাগোয়া জমি থেকে ৮ শতক জমি দিতে চায়। কিন্তু গনি সেটি নিতে নারাজ। পরের দিন স্থানীয় কাউকে না জানিয়ে লোকজন নিয়ে এসে জমিতে পাঁচিল দিতে যায় গণি। এসময় আব্দুল গনির নেতৃত্বে মজনু, তোতা, আনার, মনি, আরিজুলসহ ২০/২৫জন হামলা করে। হামলা করতে যেয়ে তাদের নিজেদের অস্ত্রে নিজেরা আহত হয়।’ পিপি আব্দুল লতিফের ছেলে আমিনুল হক রাসেল হামলায় অংশ নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হামলার ঘটনার দিন রাসেল ঘটনাস্থলে ছিলনা।’
এদিকে নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলার আসামী করার ঘটনাটি এখন কামারবায়সা গ্রামের মানুষের মুখে মুখে।