
শেখ আব্দুল হাকিম, শ্যামনগর থেকে: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ১২২নং খোলপেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। শিক্ষক সংকটসহ প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন স্কুলে না আসার অভিযোগ অভিভাবকদের। খোলপেটুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শ‚ন্য, দিন চুক্তি শিক্ষকের মাধ্যমে চলছে স্কুল কার্যক্রম। সরেজমিনে দেখা যায়, গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ছাত্র ছাত্রীরা ছোটাছুটি করছে। স্কুলে ২ জন শিক্ষক থাকলেও প্রধান শিক্ষক আসেননা স্কুলে। একজন সহকারী শিক্ষক দিয়ে চলছে ৪৩৩ শিশুর পাঠদান। অফিস কক্ষে দেখা যায়, টেবিল চেয়ারে ধুলা বালির আবরণ, মাকড়সা জাল, দেখলে মনে হবে যেন ভুতুড়ে কোন কক্ষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক মাসে এক-দুইদিন স্কুলে আসেন। অফিসের কাজে উপজেলা শিক্ষকা অফিসে থাকেন। এভাবে টানা ১৮ বছর যাবৎ বিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় ¯ু‹লের কার্যক্রম চালান প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। বিদ্যালয়ে খাতা কলমে দেখা যায় চারজন শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক মিরা বালা প্রশিক্ষণে আছেন। ফরহাদ হোসেন সাময়িক বরখাস্ত হয়ে আছেন। প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন থাকেন শ্যামনগর সদরে। আর অপর সহকারী শিক্ষক বুদ্ধদেব জোয়ার্দার বিদ্যালয়ে আসেন অনিয়মিত। স্থাানীয় বাবু খান, শাহাদাত হোসেন ও কুমকুম আক্তার নামে তিনকে দিন চুক্তিতে শিক্ষক বানিয়ে ৪৩৩ জন ছাত্র-ছাত্রীর পাঠদান করান।
অভিভাবক আবুল কালাম ও মরিয়ম বেগম জানান, স্কুলে বর্তমানে ম্যানেজিং কমিটি নেই। শিক্ষক সংকট রয়েছে। অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকদের কোন সম্পর্ক নেই। হেড স্যার আসেন না। থাকেন শ্যামনগরে। তিন জন প্যারা শিক্ষক দিয়ে নিজের কাজ সারেন।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রাক্তন সভাপতি হাফেজ মাহমুদুল হাসান জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে জমিদাতা হিসেবে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সকল কার্যক্রমে আমি ছিলাম, কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবৎ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম দিকে হতাশ হচ্ছি। বিদ্যালয়ে বর্তমানে কোন ম্যানেজিং কমিটি নেই, শিক্ষকও নেই। এসময় শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলে, হেড স্যার শ্যামনগরে থাকেন। ফাঁকে ফাঁকে আসেন, আবার চলে যান। আমরা স্কুলে এসে খেলাধুলা করি যে স্যারেরা আছেন তারা কিছু বলে না।
সহকারী শিক্ষক বুদ্ধদেব জোয়ার্দার অনিয়মিত ভাবে স্কুলে আসার কথা জানতে চাহিলে তিনি বলেন, প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিাত থাকেন বলে দাবি করলেও হাজিরা খাতা দেখতে চাহিলে সাদাসিধা ভাষায় জানান, হাজিরা খাতা আলমারিতে। আর চাবি হেড স্যারের কাছে, স্যার যখন আসেন তখন স্বাক্ষর করে নেন।
গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া গ্রামের মেম্বার হাবিবুল্লাহ বলেন, এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে দেলোয়ার হোসেন, বর্তমান প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। তার হেয়ালিপনায় বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এখনো ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। প্রধান শিক্ষক নিজে স্কুল করেন না। আর বিদ্যালয়ে শিক্ষক রাখার বদলে নিজের স্বার্থের জন্য শিক্ষকদের বদলিতে সুপারিশ করেন।
প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন মোবাইলে বলেন, স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা কম। আমি বার বার উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে বলার পরও তারা শিক্ষক দিচ্ছেন না। আমি একা আর কত দেখবো। আমি নিয়মিত স্কুলে যায়। গত এক সপ্তায় ছুটিতে ছিলাম। শ্যামনগর উপজেলা সদরে বাসা থাকায় মাঝে মাঝে অনিয়ম হচ্ছে, তবে আর হবেনা বলে জানান।
শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিজ মিঞা বলেন, প্রধান শিক্ষক নিজে স্কুল না করে বেতনের টাকায় তিনজন প্যারা শিক্ষক দিয়ে স্কুল চালানোর বিষয়ে সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্যারা শিক্ষকদের টাকা দিয়ে স্কুলে রাখা যাবে না।