
আতিয়ার রহমান, মণিরামপুর (যশোর): যশোরের মণিরামপুর পৌর শহরের স্বরুপদাহ গ্রামের আব্বাস উদ্দীন ভাড়ায় চালান মোটর সাইকেল। দু’চাকার পরেই তার পুরো সংসারটাই চলে। লকডাউনের কারণে গত ক’দিন কোন ভাড়াপাতি না থাকায় চরম কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে তার। একে তো রমজান মাস, সামনে আসছে ঈদ, এদের সকলেরই যেন স্বপ্ন ভেঙ্গে যাচ্ছে। সংসারে মা-বাবা স্ত্রী সন্তান নিয়েই উপজেলার কয়েক শ’ পরিবারের জীবন-জীবিকা চলে মোটর সাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে। খেদাপাড়ার রেজাউল করিম, ভাড়ায় চালক আকবার হোসেন, সুলতান পারভেজ, লিটন, শরিফুল ইসলাম, তাহেরপুর গ্রামের মোস্তফা ও মনিরুল ইসলামের সাথে শনিবার কথা হয় এ প্রতিবেদকের। লকডাউনে যাত্রী বহন বন্ধ থাকায় চরম কষ্টে দিন কাটছে তাদের। যদিও অনেকেই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হলেও কোন ভাড়াপাতি হচ্ছে না। তাহেরপুরের মনিরুল ও মোস্তফা বলেন, অভাবের তাড়নায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হলেও, কোন লোকজন নেই রাস্তায়। যার ফলে পরিবার নিয়ে চরম কষ্টে দিন যাচ্ছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, মণিরামপুরের রাজগঞ্জ, খেদাপাড়া, নেহালপুর, ঢাকুরিয়া, ভান্ডারী মোড়, দূর্গাপুর মোড় এবং দোলখোলা সড়কে ৮শতাধিক ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল রয়েছে। অভাবগ্রস্থ পরিবারের সদস্যরা জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে মোটর সাইকেল ভাড়ায় চালায় তারা। একটি মোটর সাইকেলের দু’চাকার পরে সংসার চলে এদের। গত ক’দিন লকডাউন থাকায় যাত্রী বহনে কাজ করতে পারছেন না প্রশাসনের চাপে। এসব চালকদের কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে বের হলেও কোন ভাড়া পাতি হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চালকরা। উপজেলার রাজগঞ্জ সড়কে ২’শ ২৫খানা মোটর সাইকেল ভাড়ায় চলে। এ সড়কের চালক সমিতির সভাপতি মিন্টু এবং সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, মোটর সাইকেল ভাড়া চালিয়ে সংসার চালায় নিতান্তই অভাবী পরিবারে লোকজন। লকডাউনের ফলে বাড়ীতে বসে সময় পার করতে হচ্ছে। যে কারণে চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতি পাত করছেন প্রত্যেকটি পরিবার। খেদাপাড়া সড়কের সভাপতি মশিয়ার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদও একই কথা বলেছেন। নেহালপুর সড়কের মোটর সাইকেল ভাড়ায় চালক ইকবাল হোসেন বলেন, সংসার চালানোর কোন উপায় নেই তার। তারপরও রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে বের হতে হচ্ছে। কিন্তু ভাড়াপাতি না থাকায় কোন আয়-রোজগার হচ্ছে না। ঢাকুরিয়া সড়কের ভাড়ায় চালক রবিউল ইসলামও একই কষ্টের কথা বলেছেন। তবে এসব চালকরা সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা দাবী করে বলেন, সামনে ঈদ সরকার যদি আমাদের একটু সহযোগিতা করেন তাহলে ঈদ উপলক্ষে মা-বাবা স্ত্রী সন্তানদের দু’মুঠো ভাত দেওয়া সম্ভব হবে।
মণিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমা খানম বলেন, উপজেলাধীন মোটর সাইকেল চালকরা সমষ্টিগত ভাবে আমার কাছে আইডি কার্ডের ফটোকপিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিলে সরকারের কাছ থেকে তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো।