
মাসুদুর রহমান মাসুদ: জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার দেশের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়ন সহ দেশের সার্বিক উন্নয়ন করে একটি উন্নত ও স্বনিরর্ভর দেশে গঠনের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপিত হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সাতক্ষীরা জেলাবাসীর জন্য গর্ব। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জেলাবাসীর চিকিৎসা সেবাকে সহজলভ্য করেছে। এখানে যে আধুনিক সুযোগ সুবিধা রয়েছে তার সাথে কার্ডিওলজি বিভাগ (করোনারী কেয়ার ইউনিট) চালু হওয়ায় জেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। রবিবার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগ (করোনারী কেয়ার ইউনিট) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত স্বদিচ্ছায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়েছে। এখানে অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তা ও চিকিৎসক আছেন। তাই এখানে এসে রোগীরা যাতে অনায়াসে কাঙ্খিত সেবা পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি এখন থেকে পূর্ণাঙ্গরুপে সাতক্ষীরার ২২ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আয়োজনে সাতক্ষীরাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত এ বিভাগটির উদ্বোধন শেষে কনফারেন্স রুমে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী ডা. আ.ফ.ম রুহুল হক এমপি। এ সময় ডা. রুহুল হক তার বক্তব্যে বলেন, সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ায় চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে জেলাবাসীর অনেক উপকার হয়েছে। এখানকার স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত হয়েছে। গরীব দুঃখী মানুষকে এখন আর সহজেই ঢকা-খুলনা যাওয়া লাগে না। ঢাকা-খুলনায় যেয়ে মানুষ যে ব্যবয়বহুল চিকিৎসা সেবা নিতো, এখন সহজেই তারা তা হাতের কাছে পাচ্ছে।
তিনি বলেন, এখানে যারা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তারা অনেক অভিজ্ঞ ও দক্ষ। এখানে চিহিৎসা সংক্রান্ত অনেক বিভাগ চালু করা হয়েছে। যেগুলো এখনো চালু হয়নি ভবিষ্যতে সেগুলোও চালু করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে চলমান ইউনিটগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। যেসব যন্ত্রপাতি রিপ্লেস করার দরকার সেগুলো সবাই মিলে করতে হবে। শুধু দু’একটি রোগী দেখলেই হবে না, মানুষকে সেবা দিতে হবে। একে অপরের সহযোগিতায় কাজ করতে হবে। আমি সবার সাথে আছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা স্বাচিপ এর সভাপতি ডা. মোখলেছুর রহমান তার বলেন, আজকে সিসিইউ উদ্বোধন হয়েছে, আজ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের একটি স্মরনীয় দিন। আগে মানুষ জটিল রোগে আকান্ত হয়ে পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে যেতো এখন মানুষ সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে (সামেক) হাসপাতালে আসে। সামেক হওয়ায় গরীব রোগীরা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে। তিনি বলেন, করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) এর উদ্বোধনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ডা. রুহুল হক এমপি’র।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাতক্ষীলা সিভিল সার্জন হুসাইন শাফায়াত বলেন, খুলনা বিভাগে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো এতো চমৎকার স্থাপনা নেই। এখানে আরও ম্যান পাওয়ার লাগবে। এর সমস্যাগুলো আমি জানবো এবং আমি আমার জায়গা থেকে এর সার্বিক মানোন্নয়নের জন্য কতাজ করবো।
সভায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. রুহুল কুদ্দুস তার বক্তব্যে বলেন, ডা. রুহুল হক এমপি’র বিশেষ উদ্যোগ ও বদন্যতায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়েছে। এখানকার উপকরনগুলো তার আমলে কেনা। এখন অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি বাজারে এসেছে, আমাদের এখানকার জন্য সেগুলো দরকার। তিনি বলেন, এখানকার অনেক চিকিৎসকেরই কার্ডিওলজিতে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে। তাই আশা করি সিসিইউ অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
সভায় জেলা স্বাচিপ এর সাধারণ সম্পাদক ডা. মনোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, বেসরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা নেয়া আমাদের দেশের গরীব মানুষের জন্য খুবই ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই সরকারি সেক্টরে যদি আমরা জনগনকে জটিল ও ব্যয়বহুল রোগের চিকিৎসা সেবা দিতে পারতাম তাহলে দেশের দারিদ্র কমে আসতো। মানুষ সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারতো। তিনি বলেন, ডা. রুহুল হক স্যারের মাধ্যমে আমরা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ পেয়েছি, তিনি এর জন্য আর কাজ করে যাবেন।
সভায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সুজন তার বক্তব্যে বলেন, অবহেলিত সাতক্ষীরা জেলায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপিত হওয়ায় মানুষ অনেক উপকৃত হচ্ছে। আজকে কার্ডিওলজি বিভাগ চালু হওয়ায় জেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবার পাওয়ার সুযোগ আরও একধাপ এগিয়ে গেল। তিনি এখানকার স্বাস্থ্য সেবা আর অধিক সহজলভ্য করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
সভায় অর্থোপেডিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.কামরুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, ডা. রুহুল হক স্যারের মাধ্যমে আমরা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ পেয়েছি, আমরা একটি পূর্নাঙ্গ মেডিকেল কলেজের দ্বারপ্রান্তে আছি। স্যার যে কাজ করেছেন তা একধরনের সাদাকায়ে জারিয়া। তাই দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ কে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে।
সভায় মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজী আরিফ আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, ডা. রুহুল হক স্যারের নের্তৃত্বেই এই সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়েছে। শ্যামনগরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় তিনি এর দাবী করেন। এটি সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষ উপকৃত হচ্ছে, আমরা এখানে সবাই মিলে মানুষের সেবা দিয়ে যাব।
সভায় গাইনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শংকর প্রসাদ বিশ^াস তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগ হবে জনগনের জন্য। তার কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর সাতক্ষীরায় তার বাস্তবায়ন করছেন ডা. রুহুল হক এমপি। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সামেক একটি পূর্নাঙ্গ হাসপাতাল হতে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কুদরত-ই-খুদা বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে করোনারী কেয়ার ইউনিট চালু করার জন্য এখানকার কয়েকজন ডা. অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ডা. রুহুল হক সহ সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সিসিইউ চালু হয়েছে এখন এর সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে। আমি সবাইকে সাথে নিয়ে, সবার পরামর্শ নিয়ে এখানকার স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত করতে চাই।
ডা. সুতপা চ্যাটার্জির উপস্থাপনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন কার্ডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সঞ্জয় সরকার, সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শরিফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এবং দৈনিক সাতনদী পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশ হাবিবুর রহমান, বার্তা সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, কার্ডিওলজি বিভাগের ড. সুমন কুমার দাশ, ডা. আমির হোসেন, ডা. মনিরুজ্জ¥ান, ডা. তৌফিকুল ইসলাম, ডা. শংকর কুমার ঘোষ, ডা. আব্দুল্লাহ আল মানজুরুল, ডা. অনিন্দ কুমার সৌরভ, ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস ও ডা. ফৌজিয়া তাসনিম প্রমুখ।