
তালা অফিস থেকে নজরুল ইসলাম: বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক প্রশস্তকরণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ চলছে শম্ভুক গতিতে। এই প্রধান সড়কের সড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পে অন্তত তিনবার মেয়াদ ও বরাদ্দ বৃদ্ধি হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কালক্ষেপণ ও কতৃপক্ষের গাফিলতির কারণে কাজ সমাপ্ত হতে বিলম্ব হওয়ায় বাড়ছে জনদূর্ভোগ ! সর্বশেষ সময় অনুযায়ী ২৬ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এপর্যন্ত অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। ফলে জরাজীর্ণ রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচলে জনভোগান্তি সহ যে কোন সময় দূর্ঘটনায় কবলিত হয়ে জীবনহানির আশংকা রয়েছে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারীতে বেতগ্রাম-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়ক যথাযথ মানে উন্নয়ন করণ প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়। দরপত্র শেষে কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। ২৯ ডিসেম্বর তাদের ৩৩৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে নানা কারণ দেখিয়ে এক বছর করে তিন-চার দফা সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন করা হয়। প্রকল্পে ব্যয় বাড়ানো হয় আরও ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্পের মধ্য থেকে তিন কিলোমিটার অংশের জন্য আলাদা করে ব্যয় বাড়ানো হয় আরোও ৫৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ তালা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ছয় ফুট প্রশস্তকরণের জন্য বরাদ্দ করা হয় আরোও ১শ’ কোটি টাকা। এভাবে প্রকল্পের ব্যয় ১৯৫ কোটি বেড়ে ৫৩৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকার আকাশচুম্বি ব্যয়ে প্রকল্প বরাদ্দ করা হলেও কাজটির দ্রুতার সাথে সম্পন্ন করার উদ্দ্যোগ নেই।
সরেজমিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ধীরগতিতে কাজ করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন। বাঁক সোজা করার কাজ ৭০-৮০ ভাগ শেষ হলেও সড়ক প্রশস্ত করার কাজ হয়েছে মাত্র ৫০-৬০ ভাগ। অনেক জায়গায় ১০-২০ ভাগও কাজ হয়নি। তবে এসব কাজ করার কারণে পথচারীসহ যানচলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
একাধিক পথচারী জানান, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়া ও কয়েকবার বার সময় বাড়ানোর ফলে বিড়ম্বনা বেড়েছে সড়ক ব্যবহারকারীদের। চলাচলের সময় কাদাপানিতে সাধারণ মানুষ নাজেহাল হচ্ছে, বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচলে। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে চরম সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। বিশেষ করে হাসপাতালে যেতে রোগীদের রাস্তার মাঝেই কেটে যায় দীর্ঘ সময়।আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে এলাকার মানুষ সন্দেহ পোষণ করলেও আশাবাদী সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সড়ক বিভাগ জানায়, সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ৩০ টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সোজা করা। এতে ১১.২৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। যার কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। কিছু জমি জায়গা নিয়ে মামলা মোকদ্দমার ঝামেলা পোহাতে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এছাড়া সরকার পতনের সময় বেশকিছু দিন কাজ বন্ধ ছিল। গত নভেম্বর থেকে আবার পূর্ণ গতিতে কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনও অনেক শ্রমিক কাজে যোগ দিতে পারেনি।
প্রাইভেট ড্রাইভার জাহিদুল ইসলাম বলেন, আগে তালা থেকে কয়রা যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগতো, বর্তমান সময় লাগে ৪ ঘণ্টা । গাড়িতে তেল খরচ হচ্ছে বেশি। ফলে যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ।
ভ্যানে চলাচলকারী রহিমাবাদ গ্রামের বাহারুল মোড়ল বলেন, এক রাস্তা সং‹ার করতে আর কত বছর লাগবে! ৩ বছর তো হয়ে গেলো। ধুলোবালি আর বৃষ্টির সময় কাদা পানিতে পথচারীদের নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে।
খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী, সড়ক বিভাগ মোঃ তানিমুল হক বলেন, প্রকল্পটি ২৬ সালের জুন মাসে শেষ হবে। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে সময় বাড়াতে হয়েছে। সরকার এই রাস্তাটি জনগুরত্বপূর্ণ মনে না করায় কাজ শেষ হচ্ছে না। বরাদ্দ থাকা সত্বেও সরকারী একজন কর্মকর্তার এহেন বক্তব্য দায়িত্বহীনতার সামিল।
তাালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপা রানী সরকার বলেন, তিনি ঠিকাদারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। কাজ চলমান থাকলেও ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন করা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।তিনি জনস্বার্থে গুরত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য খুলনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশর্লীর দৃষ্টি আকর্ষন করেন।