
নজরুল ইসলাম, তালা থেকে: নিজের ভাঙ্গা ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে প্রতিপক্ষকে ফাসিঁয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আবুল হোসেন মাহমুদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তালা থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলিয়া গ্রামের মৃত: কেরামত মাহমুদের ছেলে আবুল হোসেন মাহমুদের সহিত প্রতিবেশী মিজানুর, জিয়া, জলিল, হামেদ,ইদ্রিসদের দীর্ঘদিন ধরে ভিটাবাড়ির সীমানা নির্ধারণ নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল।এ বিষয় নিয়ে ইতিপূর্বে কয়েকবার মারামারির ঘটনায়ও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
ঘূর্ণীঝড় আম্পানে হামেদ আলির বসতঘর ভেঙে যায়। সেই জায়গায় কিছুদিন আগে হামেদ আলী নতুন ঘর তৈরী করতে চাইলে আবুল হোসেন বাঁধা দিলে মারামারি হয়। আবুল হোসেন থানায় অভিযোগ করলে (০৭ অক্টোবর) রাতে থানার গোল ঘরে তালা থানা অফিসার ইনচার্জ মেহেদী রাসেল আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করেন এবং যে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেন।
শালিসের রায় নিজের পক্ষে না আসায় থানা থেকে ফিরে আবুল হোসেনের পাটখড়ির বেড়া ও পলিথিনের চালের তৈরী বসতঘর থেকে সমস্ত জিনিসপত্র এমনকি গরুগুলো পাশেই মামা কফিলউদ্দীনের বাড়িতে রেখে আসে। এর পর রাত ৩ টার দিকে ওই ঘরেই আগুন ধরিয়ে দেয় সে। ঘরপুড়ে শেষ হওয়ার পূর্বেই প্রতিবেশীদের সামনে দিয়ে আবার গরুসহ জিনিসপত্র নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে।
সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, আবুল হোসেনের বসতঘরটি তখনও আগুনে পুড়ছে। তবে ওই পোড়া ঘরে মধ্যে বিছানা, কাঁথা, বালিশ পোড়ার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। তারা ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকলেও কাহারো গাঁয়ে আগুনের তাপ লাগা বা পোড়ার কোনো ক্ষত সহ আসবাবপত্র পোড়ার কোনো নমুনা দেখা যায়নি।
প্রতিবেশী মেহেদী মোড়ল (৩০), সিরাজুল মোড়ল (৬৫), মতিয়ার মোড়ল, আতিয়ার মোড়ল, নুরজাহান বেগম জানান, ঘরে আগুন দেয়ার পূর্বে আবুল হোসেন,তার ভাই ও পুত্র ঘরের যাবতীয় জিনিষপত্র ও গরু রাস্তার ওপাশে মামার বাড়িতে রেখে আসে। ঘর পুড়ে যাওয়ার পরে পুলিশসহ সকলের সামনে ওই রাতে গরুগুলি বাড়িতে নিয়ে আসে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আবুল হোসেন গরু অনত্র রেখে আসলে এলাকার মানুষের মাঝে গুজ্ঞনের সৃষ্টি হয়।
আবুল হোসেন মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন আমাদের বসতভিটার সীমানা নিয়ে বিরোধের কারণে প্রতিপক্ষরা আমার ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আমরা রাতে ঘরে ঘুমিয়ে থাকা কালীন সময়ে আনুমানিক রাত তিনটার দিকে ঘরে আগুন দেয় তারা। তবে আমরা কাউকে দেখতে পায়নি। বিছানা, বালিশ ও কাঁথা না পোড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
আবুলের স্ত্রী বলেন, ঘরে আগুন লাগলে আমি গোয়ল ঘরে ঢুকে গরুর গলার দড়ি কেঁটে দিয়ে গরু বের করে দেয়ার কারণে গরুগুলো পুড়তে পারেনি তবে আবুলের মা বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ঘরে আগুন লাগলে আমরা গরু গোয়াল থেকে বের করে গাছে বেঁধে রেখে আসি। ঘরে রক্ষিত টাকা পয়সা পুড়ে গেছে কিনা জানতে চাইলে আবুলের স্ত্রী একেক সময় একেক রকম কথা বলেন। তিনি কখনো ৫, কখনো ২০ আবার কখনো ৩০ হাজার টাকা পুড়ে গেছে বলে প্রতিবেদকে জানান।
হামেদের স্ত্রী বলেন, থানা থেকে ফিরে এসে সারারাত ওরা ঘুমায়নি। প্রায় অর্ধেক রাত পর্যন্ত তারা ঘরের মালপত্র গরু পাশে কফিল উদ্দীনের বাড়িতে রেখে আসে। এরপর রাত ৩টার দিকে আমাদের নামে মামলা করার জন্য নিজেদের ঘরে নিজেরাই আগুন ধরিয়ে দেয়। যখন ঘরে আগুন জ¦লছিল তখন কেরসিন তেলের গন্ধ লাগছিল। ওই রাতে সেখানে উপস্থিত সবাই সেটা জানে।
ইদ্রিস আলী বলেন, অনেকদিন ধরে আমাদের সীমানা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। আমাদের ফাঁসানোর জন্য তারা নিজেরা ঘরে আগুন দেয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের ভিটায় আমরা ঘর তৈরী করতে পারছি না। আমার ভাই হামেদের যেখানে ঘর ছিল সেখানেই সে ঘর তৈরী করতে গেলে প্রতিপক্ষরা বাঁধা দিচ্ছে।
এলাকার প্রবীণ অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক কফিল উদ্দীন (৮৫) বলেন, রাতে ঘরে আগুন লাগলে আমরা আগুন নিভানোর জন্য এগিয়ে গেলে তারা আগুনে পানি দিতে বাঁধা দেয়। তারা কাউকে সাহায্য করতে দেয়নি। তাদের অত্যাচারে এলাকার সবাই অতিষ্ঠ।
তেঁতুলিয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ বলেন, আবুল হোসেন আমার প্রতিবেশী। রাতে তার ঘরে আগুন জ¦লতে দেখে আমরা আগুন নিভানোর জন্য পানি দিতে গেলে তারা বাঁধা দেয়। যখন আগুন জ¦লছিল সেখানে কেরসিন তেলের গন্ধ বের হচ্ছিল। আমার মনে হয়, তারা নিজেরাই ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
কলিয়া বাজারের মুদি ব্যবসায়ী আব্দুল হক মোড়ল বলেন, ঘটনার দিন রাতে আমার দোকান থেকে আবুল হোসেন ১ লিটার কেরসিন তেল কিনে নিয়ে গেছে। কি কাজে লাগাবে বা লাগিয়েছে তা আমি জানি না। তবে ওই রাতে তার ঘর পুড়ে গেছে শুনেছি।
এবিষয়ে তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, আবুলের ঘর পুড়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তবে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পুর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।