
* বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক লীগ মুখোমুখি
* আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পরষ্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মিছিল
* থানায় মামলা: উভয় পক্ষের গ্রেফতার ১০
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি ও জাতীয় শ্রমিক লীগের একাংশের মধ্যে বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদের ঘনিষ্ঠ মিত্র জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বিবিসির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের তিক্ততা এতটাই প্রবল হয়েছে যে একে অপরের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছেন। বিগত দেড় বছর ধরে অধ্যক্ষ আবু আহমেদ ও মাহমুদুল আলম বিবিসিকে দলীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামে একসাথে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে দুই নেতার এমন বিপরীতমুখি অবস্থানের কারণে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধ, মারপিটের ঘটনায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও শ্রমিক অঙ্গণে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে মাহমুদুল আলম বিবিসি ও তার সঙ্গীয়দের মিছিল সমাবেশকে মাদক কারবারীদের মিছিল বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আবু আহমেদের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দুবাই প্রবাসী মাহমুদুল আলম বিবিসি দেশে ফিরে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দেড় বছর মিলেমিশে থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন ঘটে। এমতাবস্থায় গত ২৬ জুলাই রাতে শহরের রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা রেজাউলকে ডিবি পুলিশ সদর হাসপাতালের সামনে থেকে মাদকসহ গ্রেফতার করে। সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরে ইজিবাইক থেকে চাঁদা উত্তোলনের কারণে ঝাউডাঙ্গার ফজলুর রহমানকে আটক করে পুলিশে খবর দেয় মাহমুদুল আলম বিবিসির নেতৃত্বে শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দ। পরে মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে এসে ফজলুর রহমানকে সাতক্ষীরা বাস টার্মিনালের স্টার্টার দাবী করে তাকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যায়। পরে ফজলুর রহমান সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনার পরেরদিন মঙ্গলবার বাসটার্মিনালের স্টার্টার পলাশ ও শরিফুলকে মধুমল্লারডাঙ্গী এলাকায় ফেলে মারপিট করে মাহমুদুল আলম বিবিসি সমর্থিত শ্রমিকলীগের কর্মীরা। মারপিটের শিকার শরিফুল ইসলাম শরীফ বাদী হয়ে ১২ আগস্ট সদর থানায় মাহমুদুল আলম বিবিসিকে প্রধান আসামী করে ২২ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ও অজ্ঞাত ২০/২২ জনকে আসামী করে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং ২৪। এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামী মন্টু, রাজাসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ। মাহমুদুল আলম বিবিসি জানান, আবু আহমেদ ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমাকে ও আমাদের দলের লোকদের মাদক কারবারি আখ্যা দিয়ে তার নিজস্ব পত্রিকায় গত ৭ আগস্ট মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করেন যা দুঃখজনক। আমাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ক্ষেপিয়ে তুলতে তিনি এটি করেছেন। প্রশাসন ও জনগণ তার অপচেষ্ঠা বুঝতে পেরেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ও শ্রমিক হয়রানী, সড়কে চাদাবাজি বন্ধের জন্য আমরা ৮ আগস্ট একটি বিক্ষোভ মিছিল করি। এ বিষয়টিও ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে আবু আহমেদ তার পত্রিকা কালের চিত্রে আমাদের সবাইকে ঢালাওভাবে মাদক কারবারি আখ্যা দিয়ে মাদক কারবারিদের মিছিল বলে সংবাদ প্রকাশ করে। যা দুঃখজনক। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) খুলনা রোড মোড়ে মাহিন্দ্র স্টার্টার ও শ্রমিক লীগের কর্মী শহরের পলাশপোল এলাকার মৃত ছফুর গাজীর পুত্র বাবলা গাজী মন্টুকে মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম কালু ও শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে মারপিট করে বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। এ ঘটনায় বাবলা গাজী মন্টু বাদী হয়ে গত ১২ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানায় শহিদুল ইসলাম কালু ও শরিফুল ইসলাম সহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ২৫, জি.আর ৪৫২/২৩। এ ঘটনায় সাতক্ষীরা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে এজাহার নামীয় ৭ জন আসামী আমিনুর রহমান, এনামুল কবির, লিটন, আব্দুল আলীম, সাইফুল ইসলাম, হোসেন ও আকাশকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। বাস মালিক সমিতি ও জেলা শ্রমিক লীগের পাল্টাপাল্টি মারপিট ও মামলার প্রক্রিয়ার মধ্যে পুলিশি নিরাপত্তায় রাজপথে একে অপরকে চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে অধ্যক্ষ আবু আহমেদের নেতৃত্বে মালিক সমিতি ও মাহমুদুল আলম বিবিসির নেতৃত্বে শ্রমিক লীগ। মাহিন্দ্র স্টার্টার মন্টুকে মারপিট, সড়কে চাঁদাবাজি, সাধারণ শ্রমিকদের হয়রানী ও কালের চিত্রে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে বুধবার (৯ আগস্ট) বিকালে বিবিসির নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সাতক্ষীরা পৌর শ্রমিক লীগ। উক্ত মিছিলকারীদের মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে পরদিন ১০ আগস্ট সকালে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদের নেতৃত্বে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি। এদিকে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম সাতনদীকে জানান, “স্বার্থ সিদ্ধির জন্য শ্রমিকদের একটি বিক্ষোভ মিছিলকে মাদক কারবারীদের মিছিল বলে অপচেষ্ঠা চালিয়েছে কতিপয় মিডিয়া। প্রকৃতপক্ষে অধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দোষারোপ করে চলেছে। তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে অপরাধীদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।” সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম জানান, “উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি এজাহারের ভিত্তিতে থানায় দুইটা মামলা রেকর্ড হয়েছে। অভিযান চালিয়ে মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।” এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শ্রমিক লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল আলম বিবিসি সাতনদীকে জানান, “মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ এমপি নির্বাচন করতে চায়। তার জন্য আমাদের (শ্রমিক লীগ) মাঠে নেমে প্রচার করতে বলছে। আমরা বলেছি নেত্রী ( শেখ হাসিনা) যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে মাঠে নামবো এখন কারো পক্ষে নামবো না। একারণে তার (অধ্যক্ষ আবু আহমেদ) সাথে আমার দুরত্ব তৈরি হয়। এছাড়া টার্মিনালে ভাড়াটে গুন্ডা এনে সাধারণ শ্রমিকদের হয়রানী, প্রতিটা সড়কে লাগামহীন চাঁদাবাজি, শ্রমিক লীগের কর্মী মন্টুকে মালিক সমিতি কর্তৃক মারপিটের প্রতিবাদ করলে আমাকে মাদক কারবারী আখ্যা দিয়ে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে আবু আহমেদ।” জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ গোলাম মোরশেদ জানান, “শ্রমিকদের উপর হামলার ঘটনায় থানায় দেওয়া এজাহার মামলা হিসাবে রেকর্ড করা হয়েছে। পুলিশ তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বলে আশা করি।”” সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক লীগের পাল্টাপাল্টি মিছিল, মারপিট ও মামলা দায়েরের ঘটনায় বাস টার্মিনালসহ শহর জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ অপ্রীতিকার ঘটনা ঘটার আশংকা রয়েছে।