
আহাদুর রহমান:
সাতক্ষীরায় নতুন করে ২৪ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। সকলেই ঢাকা থেকে আগত বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রোববার সন্ধ্যা ৬ টায় সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়ে। আক্রান্তদের মধ্যে ২৩ জন দেবহাটার বসন্তপুরের ও বাকি এক জন আশাশুনির।
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের করোনা বিষয়ক মুখপাত্র ডা.জয়ন্ত কুমার জানান, ২৩ জন দেবহাটা উপজেলার ও একজন আশাশুনি উপজেলার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। দেবহাটা উপজেলার ২৩ জন ঢাকা থেকে ফিরেছেন। আশাশুনির একজনের বিষয়ে জানা যায়নি এখনো। তিনি বলেন, এছাড়া করোনা রিপোর্ট পজেটিভ হাতে পাওয়া ব্যক্তিরা এখন কোথায় রয়েছে সেটি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। তবে বাড়িতেই থাকার কথা। আমরা তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্তরা হলেন, বসন্তপুর গ্রামের মোহাম্মাদ গাজীর ছেলে নুর ইসলাম গাজী (৭০), একই গ্রামের হাকিম গাজীর ছেলে হাসান গাজী (৫০), সুশীলগাতী গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে শেখ আবুল কালাম (৪০), কোড়া গ্রামের ছাত্তার গাজীর ছেলে আবু সাঈদ (১৮), প্রথম করোনা আক্রান্ত দেবহাটার মান্দার গাজীর ছেলে রেজাউল ইসলাম (৪৫), সখিপুরের রবিউল গাজীর ছেলে জয়নাল আবেদিন (৫০), দেবহাটার মোকছেদ আলী গাজীর ছেলে মুসা গাজী (৩২), একই গ্রামের জামাত আলী গাজীর তিন ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩২), আকবর আলী গাজী (৪০), হাফিজুল ইসলাম গাজী (৩৮), বসন্তপুরের আকবর আলী গাজীর স্ত্রী বানুরা (৩০), দেবহাটার মুসা গাজীর স্ত্রী হালিমা বেগম (২৩), সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর গ্রামের সাইফুল্লাহর স্ত্রী হালিমা খাতুন (২৫), বসন্তপুরের হাসান আলী গাজীর স্ত্রী জবেদা খাতুন (৪৮), সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর গ্রামের নজরুল গাজীর ছেলে সাইফুল্লাহ (২৮), সখিপুরের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী হালিমা খাতুন (৩০), দেবহাটার বসন্তপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম গাজীর শিশুপুত্র মামুন (১৪), দেবহাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রামপুলিশ মৃত হাসান গাজীর ছেলে আব্দুর রহমান (৬০), দেবহাটার আকবর আলী গাজীর শিশুকন্যা খাদিজা খাতুন (৬), দেবহাটা সদরের মুসা গাজীর শিশুপুত্র মুজাহিদ (৪), বসন্তপুরের হাসান আলী গাজীর দুই ছেলে আল আমিন (১৯), আব্দুল মান্নান (১৮), সাতক্ষীরা সদরের ধুলিহর গ্রারে সাইফুল্লাহর শিশুকন্যা সাদিয়া সুলতানা (৭) ও দুই বছর বয়সী শিশুপুত্র হাসিব বাবু।
এদিকে গত পহেলা মে শুক্রবার ভোররাতে ট্রাকে করে করোনার হটস্পট নারায়নগঞ্জ থেকে দেবহাটায় ফিরেছিল দেবহাটা সদর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামের ২৪ জন শ্রমিক। সকল শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে নারায়নগঞ্জের ইটভাটায় কর্মরত ছিল। নারায়নগঞ্জে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় সেখানে আটকা পড়েছিল দেবহাটার ওই ২৪ জন শ্রমিক। একপর্যায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারায়নগঞ্জ থেকে ট্রাকে করে পহেলা মে দেবহাটায় ফিরে আসে তারা।
তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। বাড়তি নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের করোনা টেস্ট করানো হয়।
যার মধ্যে থেকে ৫ই মে একজনের করোনা পজিটিভ ধরা পরে। সে হিসেবে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাকি ২৩ জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলফল পেয়েই কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে টেস্টের ফলাফলের অপেক্ষা না করেই ১৪ দিনের মাথায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের। কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি পেয়ে করোনা আক্রান্তরা উপজেলাব্যাপী দাপিয়ে বেড়ায়। অনেকেই সারেন ঈদের কেনাকাটা। অনেকেই আশঙ্কা করছেন করোনা ছড়িয়েছে দেবহাটা ব্যাপী। বসন্তপুরের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় আক্রান্ত ব্যাক্তিরা বাড়ি ফিরেই এলাকায় ঘোরাঘুরি করেছে। করেছে ঈদের কেনাকাটাও। এ নিয়ে এখন দেবহাটা উপজেলা ব্যাপী করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। উল্লেখ্য, করোনার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের পুরো দায়ভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন জানান, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে করোনা আক্রান্তদের এলাকায় ঘুরে বেড়ানো অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে বিষয়টি আগে কেউ প্রশাসন বা পুলিশকে জানায়নি। করোনা আক্রান্ত সকলের বাড়ি লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা পেলে করোনা ছড়িয়ে পড়া ইউনিয়নগুলোও লকডাউন করা হবে।
দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, গত পহেলা মে তারা ঢাকার নারায়নগজ্ঞ থেকে সাতক্ষীরার দেবহাটায় আসে। তাদেরকে আটক করে দেবহাটা খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ্ কলেজে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তার ৩-৪ দিন পর সেখানে একজনের করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অন্যদিকে, আজ (রোববার) যাদের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে তাদের দুইদিন আগে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি।
তিনি বলেন, আক্রান্ত ২৩ জনের বাড়ি দেবহাটা উপজেলায়। সকলের বাড়ি লকডাউন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কাজ শুরু করেছি। তাদের নাম-ঠিকানা আমাদের হাতে রয়েছে।