
ঘটনার আংশিক ভিডিও দেখতে নিউজের একেবারে নীচে যান:-
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা সদরের ব্রহ্মরাজপুরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ গাছ কাটার অযুহাতে ভাল গাছ কেটে সাবাড় করে দিয়েছে কুরবান বাহিনী। অন্তত ১০ লাখ টাকার সরকারি গাছ কৌশলে যোগসাজস করে মাত্র ৭৫ হাজার টাকায় কিনেছে বলে সরেজমিনে তথ্য মিলেছে। এসব দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সংবাদ কর্মীরা সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে।
জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর সাতক্ষীরায় বয়ে যাওয়া ঘূণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের বাড়ির পূর্ব দিকের একটি সরকারি রাস্তার পাশে কিছু গাছ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ‘বুলবুল’ ঝড়ের পরদিন তড়িঘড়ি করে কাউকে না জানিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে গোপনে সীমাবদ্ধ রেখে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বর কুরবান আলী শিল কড়ই, সিরিস চটকা, মেহগনি, মহানিম (পাহাড়ি নিম), জাম্বুরা সহ ২৪টি গাছ নাম মাত্র মূল্যে ৭৫ হাজার টাকায় ক্রয় করে। সরকারি নিয়ম-নীতি না মেনেই এসব গাছ বিক্রয় হয় বলে জানা গেছে। গত ৮-১০ দিন ধরে ‘বুলবুল’ ঝড়ে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ এসব গাছ কাটার দোহাই দিয়ে ভাল ভাল বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ কেটে সাবাড় করতে থাকে। ২৪ নভেম্বর রাতে বিষয়টি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালকে মোবাইলে কিছু সংবাদ কর্মী জানালে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
এ ঘটনার জেরে সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সাতক্ষীরা বন বিভাগের ফরেষ্টার জি,এম মারুফ বিল্লাহ সহ ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্যতা পান। পরিদর্শনকালে তারা দেখতে পান, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ নয় এমন জীবন্ত ভাল গাছ কেটে নিতে গাছের গোড়ার মাটি খোড়া হয়েছে। এছাড়া যেসব গাছ ক্ষতিগ্রস্থ নয় এমন বহু গাছ তারা কেটে নিয়েছে। এসব দেখে তাৎক্ষনিক তারা বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে।
এসব সংবাদ সরেজমিনে সংগ্রহ করতে উপস্থিত হন দৈনিক সাতনদীর মফস্বল সম্পাদক রেজাউল করিম মিঠু সহ কয়েকজন সাংবাদিক।
সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে গাছের ছবি ও ভিডিও করতে নিষেধ করে কুরবান সহ তার লোকজন। এক পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের সামনেই ক্ষিপ্ত হয়ে কুরবান মেম্বরের নেতৃত্বে তার বাহিনী সংবাদ কর্মীদের উপর চড়াও হয়। এ সময় কুরবান মেম্বর ‘সাংবাদিক শালাদের শেষ করে দে’ বলতেই তার লোকজন সংবাদ কর্মীদের ধাওয়া করে। সংবাদ কর্মীদের ধরতে না পেরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক মিঠুর ভাই আব্দুর রহিম বাবুকে পেয়ে কুরবান সহ তার লোকজন কুপিয়ে ও মারপিটে গুরুতর জখম করে। বাবুকে রক্ষা করতে গিয়ে আজহারুল ইসলাম, এশার আলি ও নুর ইসলাম আহত হয়।
দুর্নীতির ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা এ সন্ত্রাসী হামলা করে বলে স্থানীয়রা জানান।
কুরবান আলী ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বর ও নুনগোলা গ্রামের মৃত আব্দুল মালেক বদ্দীর পুত্র।
স্থানীয় এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ৭৫ হাজার টাকায় এত গাছ বিক্রি হয় এর আগে এমনটা কখনো দেখিনি। যেসব গাছ কেটে ঘটনাস্থলে ফেলে রাখা হয়েছে তার দামই তো ১০ লাখ টাকা। আর যেগুলো এখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে সেগুলোর দাম নাই বা বললাম। ঘূণিঝড় বুলবুলের দোহাই দিয়ে কুরবান বাহিনী বড় বড় ভাল গাছ কেটে নিচ্ছে। তাদের ভয়ে এসবের প্রতিবাদের কারো সাহস নেই। এ ঘটনায় কিছু রাঘব বোয়াল জড়িত আছে।
ইউপি মেম্বর কুরবান আলী জানান, আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১২টা জামবুল গাছ, মহানিম ১১টা ও একটা মেহগনি মোট ২৪টি গাছ ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধে ক্রয়কৃত গাছের বাইরে ২/১ টা ভাল গাছ কাটা হয়ে থাকতে পারে। এটা আমার ভুল হয়েছে। এসব গাছের দাম ১০ লাখ টাকা নয় বলে তিনি দাবী করেন।সংবাদ কর্মীদের উপর হামলার কথা বলতেই তিনি মোবাইলের লাইন কেটে দেন। ব্রহ্মরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, বিধি মোতাবেক গাছ বিক্রি হয়েছে। এখানে দুর্নীতির কোন প্রশ্নেই আসে না। তবে তিনি তার বক্তব্যে গাছগুলি কোন প্রকল্পের অধীনে সেটা বলতে পারিনি। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ ও ভাল জীবন্ত গাছ বিক্রি করতে পারেন না বলেও তিনি জানান।
ফরেষ্টার জিএম মারুফ বিল্লাহ মারপিট ও হামলার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আমাদের সামনেই ঘটনাটি ঘটেছে। গাছের বিষয়ে অভিযোগের প্রমান পেয়েছি। ইতিমধ্যে বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, দুর্নীতির মাধ্যমে এসব গাছ বিক্রয় করা হয়েছে। গাছ নিলামের বিষয়টি এলাকার কেউ জানে না। অতি গোপনে এটা করা হয়েছে। এসব গাছ কারা লাগিয়েছে তাদেরও কোন হদিস নেই। সরকারী রাস্তার পাশের এসব গাছ বিক্রি করতে প্রকাশ্যে নিলাম হয়ে থাকে। সেটাও করা হয়নি। গাছ লাগানো বা প্রকাশ্যে নিলাম এ সংক্রান্ত যথাযথ কাগজপত্রও ইউনিয়ন পরিষদে দেখাতে পারবে না। পুকুর চুরির মাধ্যমে সরকারি সম্পদ লুট-পাট করা হয়েছে।
ভাল গাছ কাটার জন্য মাটি খুড়ে রাখা, নিলামের বাইরে বহু গাছ কাটার দৃশ্য, আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ গাছ কাটার দৃশ্য, সরকারী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের উপস্থিতির বেশ কিছু ভিডিও চিত্র ও ছবি সাতনদীর অফিসে সংরক্ষন রয়েছে।
পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সংবাদ কর্মীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার দায়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।
ঘটনাস্থলের ভিডিও দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন: