
নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার পর তালা উপজেলায় ১৪জন ব্যক্তি পজেটিভ হিসেবে সনাক্ত হয়েছেন। প্রশাসন আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি সহ আশপাপশের শতাধিক বাড়ি তৎক্ষনাত লকডাউন করা হয়। বাড়িগুলো লকডাউন করা বিষয়ে প্রশাসন’র পক্ষ থেকে আগাম অবহিত না করায় পরিবারগুলো খাদ্য, ওষুদ বা প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহে রাখতে পারেনি। এদের মধ্যে আবার অনেক পরিবার এতোটাই দরিদ্র যে, তাদের পক্ষ্যে ২ সপ্তাহ’র খাদ্য বা প্রয়োজনীয় দ্রব্য সংগ্রহে রাখা সম্ভবনা। লকডাউনে থাকা কোনও কোনও পরিবার দিনের পর দিন বাইরের সহযোগীতা না পেয়ে এখন খাদ্য, পানীয়, ওষুদ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকটে পড়েছে। এরমধ্যে হতদরিদ্র পরিবারগুলো অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। আর কোনও কোনও পরিবার শিশু খাদ্য নিয়ে রয়েছে চরম বিপাকে।
করোনা ভাইরাসের কারনে লকডাউনে থাকা পরিবারগুলো সমাজ থেকে সম্পূর্ন পৃথক হয়ে হাট বাজারে বা অন্য কোনও কাজ-কর্মে যেতে পারছেনা। অথচ, এইসব পরিবারের মানুষগুলোর জন্য সরকারি ভাবে এখনও কোনও সহযোগীতা দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তিকে কিছু ফল ও খাদ্য দিলেও তা যৎসামান্য। এ কারনে লকডাউনে থাকা প্রায় সকল পরিবার খাদ্য, অর্থ, ওষুধ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য’র সংকটে ভুগছে। এভাবে আর কিছুদিন গেলে পরিবারগুলোর মাঝে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসবে বলে- ভুক্তভোগীরা আশংকা করছে।
তালার খলিশখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোজাফ্ফর রহমান জানান, তাঁর ইউনিয়নের দুজন ব্যক্তি করোনা পজেটিভ হলে প্রশাসন তাদের বাড়ি সহ পাশ^বর্তী আরো ২০টি বাড়ি লকডাউন করে। ঘটনার প্রায় ২ সপ্তাহ হতে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোর মাঝে এখনও কোনও খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়নি। তিনি জানান, লকডাউনে ঘরবন্ধী থাকা পরিবারগুলো কোনও সহায়তা না পেয়ে খাদ্য সংকটে ভুগছে।
মাগুরা ইউপি চেয়ারম্যান গনেশ দেবনাথ জানান, তাঁর ইউনিয়নের ১জন করোনা পজেটিভ হলে ৮/১০টি বাড়ি লকডাউন করা হয়। কিন্তু কোনও খাদ্য সহায়তা না পেয়ে তারা অর্ধাহারে অনাহারে রয়েছে।
তালা সদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন বলেন, তার ইউনিয়নের ১জন স্থায়ী এবং আর ১জন অস্থায়ী বাসিন্দা করোনা পজেটিভ হলে প্রশাসন ১০/১২টি বাড়ি লকডাউন করেন। এই সকল পরিবারগুলো কোনও সহযোগীতা না পেয়ে সংকটে পড়েছে। এদের মধ্যে তালা সদরের করোনা পজেটিভ লুৎফর রহমান মোড়ল’র পরিবার সুপেয় পানি সংকটে রয়েছে।
উপজেলার আটুলিয়া গ্রামের রিপন মোড়ল জানান, গত ১৪জুন তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসলে সে দিনই তার বাড়িসহ আশপাশের ৭টি বাড়ি লকডাউন করা হয়। কিন্তু, আজ পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রিপনসহ লক-ডাউনকৃত বাড়িগুলোর কোন খোঁজ-খবর নেয়া হয়নি। লকডাউনে থাকা এখানকার দরিদ্র পরিবারগুলো এখন চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। ক্ষুব্ধ পরিবারগুলো লকডাউন ভেঙ্গে রিপনের উপর হামলা করতে পারে বলে সে আশংকা করেছে। এছাড়া, ১৬ তারিখে তার পুনরায় স্যাম্পল কালেকশন করার কথা থাকলেও ডাক্তাররা তা করেনি। এমনকি তার প্রয়োজনীয় ওষুদ হাসপাতাল থেকে দেয়া হয়নি বলেও রিপন মোড়ল অভিযোগ করেছেন।
তালার শালিখা কলেজের প্রভাষক ও সাংবাদিক এস. আর. আওয়াল জানান, গত ৮জুন হরিহরনগর গ্রামের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম’র করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর ৯জুন তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রশাসন এদিন তার বাড়ি সহ পাশের বাড়িগুলো লকডাউন করে। এঘটনার পর থেকে সিরাজুলের পরিবার একঘরে হয়ে পড়ে। দুধ বিক্রেতারা তার বাড়িতে দুধ বিক্রি বন্ধ করে দিলে শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের শিশু সন্তান খাদ্য সংকটে পড়ে। অথচ, আজ পর্যন্ত প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিরা সিরাজুল ইসলামের সহ পাশের বাড়ির লকডাউনে থাকা পরিবারগুলোর খোজ নেয়নি।
এ বিষয়ে, জালালপুর ইউনিয়ন ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা ও সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা উপজেলায় করোনা পজেটিভ ব্যক্তিদের বাড়িতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব কিছু পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। অথচ তালা উপজেলায় এর সম্পূর্ন ব্যতিক্রম! লকডাউন থাকা পরিবারগুলো কিভাবে তাদের সংসার চালাচ্ছে সে বিষয়ে প্রশাসন খোজ না রাখায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদার জানান, তালা উপজেলা ১৮ জুন (বিকাল) পর্যন্ত ১৪জন ব্যক্তি করোনা পজেটিভ। এদের মধ্যে সঞ্জয় সরকার ও শিশু রিয়াদ ইতোমধ্যে সুস্থ্যতা অর্জন করেছেন। অন্য ১২জন ব্যক্তি বাড়ি ও হাসপাতালের আইসোলেশনে চিকিৎসাধিন রয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি সহ সংলগ্ন ৭০/৮০টি বাড়ি লকডাউনে রয়েছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের শুধুমাত্র স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ ও সেবা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।