
এসএম নজরুল ইসলাম, তালা থেকে:
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ছেলে কথিত জঙ্গি আমিনুল ইসলাম শান্ত(২০) সহ বাকি ৪ জনের নামে ৩ টি মামলা করেছেন র্যাব-১২ এর ডিএডি আনোয়ারুল ইসলাম। শনিবার বিকেলে শাহজাদপুর থানায় মামলা তিনটি করে আসামীদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মামলার বাকি অভিযুক্তরা হলেন দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানার শশরা সাহাপাড়া এলাকার মো. মানিক হোসেনের ছেলে মো. আতিউর রহমান (১৯),পাবনার সাঁথিয়া থানার দাড়ামুধা এলাকার মো. মোখলেছুর রহমানের ছেলে মো. শামীম হোসেন ওরফে কিরণ (১৯),একই এলাকার মো. আবু তালেবের ছেলে মো. নাইমুল ইসলাম (২৫)ও সাতক্ষীরার তালার বজলুর রহমানের ছেলে আমিনুল ইসলাম শান্ত(২০)।
এই চার আসামির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন,অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা করা হয়েছে। সন্ধ্যায় কড়া পাহারায় আদালতের মাধ্যমে তাঁদের সিরাজগঞ্জ জেলহাজতে পাঠানো হয়।
প্রকাশ,গত ৫ নভেম্বর শাহজাদপুরের শেরখালি উকিলপাড়ায় প্রকৌশলী শামসুল হক রাজার (শিক্ষক ফজলুল হক সাহেবের বাড়ি সংলগ্ন) বাড়িটি ছাত্র পরিচয়ে ভাড়া করে ওই চার যুবক। পরে সেখানে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে। বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে রাজশাহীর শাহ মখদুম থানা এলাকায় নব্য জেএমবির আমির মাহবুবসহ চার জনকে আটক করে র্যাব-৫।
আটক আমিরের তথ্যের ভিত্তিতে শাহজাদপুরে অভিযান চালান র্যাব সদস্যরা। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় বাড়িটি ঘিরে রাখার সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে জঙ্গিরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। বাড়িতে বড় ধরনের অস্ত্রের মজুদ আছে এমন সন্দেহে র্যাব জোড়ালোভাবে অভিযানের প্রস্তুতি নেয়। পরে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দিলে সকাল সাড়ে ১০টার পর চার জঙ্গি র্যাবের কাছে আত্মসমর্পন করে।
এসময় ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদি প্রশিক্ষণমূলক বইপুস্তক, দুটি বিদেশি পিস্তল ও বোমা তৈরির বেশকিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করে র্যাব।ওই চার জন জঙ্গির মধ্য আমিনুল ইসলাম শান্তর বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার দক্ষিণ নলতা গ্রামে।তবে আমিনুল ইসলাম শান্ত পিতা অবসর প্রাপ্ত ব্যাটালিয়ান সদস্য বজলুর রহমান বাড়ি যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় হলেও তালার দক্ষিনলতা গ্রামে দীর্ঘবছর ধরে মায়ের সাথে বসবাস করতো শান্ত।
আমিনুল ইসলাম শান্ত’র মামা জি.এম. মোস্তাফিজুর রহমান তিতু জানান, তালা থানায় কর্মরত থাকাবস্থায় আনসার ব্যাটালিয়ান সদস্য মনিরামপুর সদরের বজুুলর রহমানের সাথে তার বোন রোকসানা খাতুন বিথির বিয়ে হয় এবং তাদের একমাত্র সন্তান আমিনুল ইসলাম শান্ত। বহু বিবাহর হোতা প্রতারক বজলু অনত্র বিয়ের পর ছেলে শান্ত ও স্ত্রী’র খোজখবর নেয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে বিথি তার সন্তান আমিনুল ইসলামকে নিয়ে আমাদের এখানে(তালায়) থাকতো।
আমিনুল ছোট বেলা থেকে সহজ-সরল প্রকৃতির ছিল। সে তালা বি.দে. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সফলতার সাথে এসএসসি, তালা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে অনার্স ডিগ্রি অর্জন করে। অনার্স পাশ করার পর আমিনুল ইসলাম প্রেমজ সূত্রে একই গ্রামের শরিফুল মোড়লের মেয়ে হাবিবা খাতুনকে বিয়ে করে। এই বিয়ে নিয়ে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি হলে সে ও তার মা বিগত প্রায় ২বছর ধরে আলাদা বসবাস শুরু করে।
এসময়, সাংসারিক কারনে আমিনুল ইসলাম শান্ত খুলনায় ফুড পান্ডা নামের একটি খাদ্য সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারী বয়’র চাকরি শুরু করে। এখানে চাকরি করাকালে শান্ত’র ধর্মীয় নীতি পালনে পরিবর্তন আসে এবং মামা বাড়ির সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। খুলনায় চাকরি করাকালে সে বিপথগামী হতে পারে বলে জি.এম. মোস্তাফিজুর রহমানের ধারণা।
আমিনুলের স্ত্রী হাবিবা খাতুন জানান, তার স্বামী খুলনায় চাকরি করতেন। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না তার স্বামী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। এদিকে, স্থানীয়রা এলাকায় আমিনুলকে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে দেখেননি।
র্যাবের ভাষ্যমতে, শাহজাদপুরে আত্মসমর্পণ করা চারজনই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য। এর আগে রাজশাহী শাহ মখদুম এলাকায় মাসিক সভা করার সময় আঞ্চলিক কমান্ডার মাহমুদ সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শাহজাদপুরের উকিলপাড়া এলাকার ওই বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিদ মাহমুদ খান শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে মামলার তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, র্যাব-১২ এর ডিএডি আনোয়ারুল ইসলাম বাদী হয়ে গ্রেপ্তার চার জঙ্গির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছেন। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এবিষয়ে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী রাসেল বলেন,আমিনুল ইসলাম শান্ত র্যাবের অভিযানে আটক হবার পর তার পরিবারের বিষয়ে ব্যাপক খোজ-খবর নেয়া হচ্ছে।