
বিশেষ প্রতিবেদক, তালা:
তালার সদরের আলিয়া (ফাযিল) মাদ্রাসায় তথ্য সংগ্রহকালে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী মৌলভী সরদার আওরঙ্গজেব হোসেন ও তার সহযোগীরা। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুর আনুমানিক ১ টার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষক মিলানায়তনে সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটে। এসময় সহকারী মৌলভী সরদার আওরঙ্গজেব হোসেন ও তার সহযোগীরা আকষ্মিক সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে উঠেন।
ঘটনাস্থলে হামলা শিকার গণমাধ্যমকর্মীরা হলেন, ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি সোহাগ হোসেন, বিডি ২৪ লাইভ জেলা প্রতিনিধি শেখ ইমরান হোসেন, বাংলা ইনসাইডারের জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক পত্রদূতের নিজস্ব প্রতিনিধি এসএম হাসান আলী বাচ্চু, দৈনিক গ্রামের কন্ঠর তালা উপজেলা প্রতিনিধি কাজী জীবন বারী, মো: ফয়সাল হোসেন, সাংবাদিক লিটন হুসাইন, পার্থ প্রতিম মন্ডল।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, তালা আলিয়া (ফাযিল) মাদ্রাসায় প্রিন্সিপাল আবুল ফজল মো: নুরুল্লাহ কয়েকদিন শারীরিক অসুস্থতার কারণে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই অনুপস্থিত থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে মাদ্রাসার গভনিং বডির সভাপতি সরদার জাকির হোসেন কোন ঘোষনা ছাড়াই মঙ্গলবার(২১ ফেব্রুয়ারী) ছুটির দিন আকস্কিক মিটিং কল করে প্রিন্সিপালকে সাময়িক বরখাস্ত করে আরবি কাম প্রভাষক এ জেড এম আবু বক্কর সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল করেন। যাহা আইন বর্হিভূত। বিষয়টি জানতে পেরে প্রিন্সিপাল মো: নুরুল্লাহ প্রতিষ্ঠানে হাজির হন তার অফিসে বসতে গেলে তাকে মারপিট করে বাহির করে দেওয়ার কথা বলেন সহকারী মৌলভী সরদার আওরঙ্গজেব । এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রেক্ষিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনা স্থলে হাজির হন।
এসময় গণমাধ্যমকর্মীরা প্রিন্সিপাল মো: নুরুল্লাহর ভিডিও বক্তব্য ধারণ করতে থাকার একটি পর্যায়ে গভনিং বডির সভাপতি সরদার জাকির হোসেনের ভাই অত্র প্রতিষ্ঠানের সহকারী মৌলভী সরদার আওরঙ্গজেব হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা মারপিট করার প্রস্তুতি নেন। এছাড়া জুনিয়ার শিক্ষক ফরিদ হোসেন সহ গুটি কয়েক শিক্ষক একত্রিত হয়ে লাঠি নিয়ে মারতে উদ্যত হয়ে এলাকার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যদের ফোন করে আসতে বলে এবং গণমাধ্যমকর্মীরা রুমের ভিতর আটকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। তৎক্ষণাত গণমাধ্যমকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও তালা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) কে বিষয়টি অবহিত করে ঘটনা স্থল ত্যাগ করেন।
এবিষয়ে প্রিন্সিপাল আবুল ফজল মো: নুরুল্লাহ জানান, আমি শারীরিক ভাবে কয়েকদিন অসুস্থ থাকায় গভনিং বডির সভাপতি ও মাদ্রাসার বিপথগামী কিছু শিক্ষক একত্রিত হয়ে আমাকে সাময়িক বহিস্কার করেন। যাহা নিয়ম বহিভূত হিসেবে গণ্য। একজন প্রিন্সিপাল বা প্রভাষকদের বহিস্কার করতে হলে প্রথমে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করতে হবে। তার জবাব নিয়ে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে বা ভার্সিটিতে অভিযোগ করতে হবে। সেখান হতে একটি টিম প্রতিষ্ঠানে এসে তদন্ত অন্তে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, মাদ্রাসার গভনিং বডির সভাপতি সরদার জাকির হোসেন নির্বাচনের সময় আমার কাছ হতে ৫ লক্ষ টাকা নেন হাওলাত হিসেবে। যাহা তিনি বলেন, একটি নিয়োগ করিয়ে টাকা ফেরৎ দিবেন। এছাড়া এই সভাপতি সরদার জাকির হোসেন, আরবি কাম প্রভাষক এ জেড এম আবু বক্কর সিদ্দিকী, সহকারী মৌলভী সরদার আওরঙ্গজেব হোসেন বিভিন্ন লোকের কাছ হতে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ১২-১৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ঘটনাস্থলে তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, পেশাগত দায়িত্ব পালন কালে মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী সরদার আওরঙ্গজেব সহ কতিপয় বিপথগামী শিক্ষকরা একত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারতে উদ্যত হয়। বিষয়টি সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার( ভারপ্রাপ্ত) ও তালা থানার অফিসার ইনচার্জ কে অবহিত করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় মামলা প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) রুহুল কুদ্দুস জানান, বিষয়টি মাত্র জানতে পারলাম। অভিযুক্তদের এক্ষুণি তলব করে বিস্তারিত জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।