
আহাদুর রহমান জনি: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত বেতনা নদী খননে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদী খনন না করে পুরাতন ভেড়িবাঁধসহ সরকারি রাস্তার গাঁ ঘেঁষে মাটি কেটে রাতের অন্ধকারে বিক্রি করছে সাব-কন্ট্রাক্টর শাহীন। স্থানীয় কিছু মাটি খেকো দূর্বৃত্তদের সহায়তায় আশেপাশের ভাটায় কোটি টাকার মাটি বিক্রি করেছে সে। মাটি খেকোদের দৌরাত্মে ঝুঁকিতে পড়েছে পাউবোর শহর রক্ষা বাঁধ। সাব কন্ডাক্টর শাহিন সাবেক মেম্বার শরিফুজ্জামান ময়না ও মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে তাদের বাহিনী নিয়ে বেড়িবাঁধের মাটি কেটে ডাম্পার গাড়ি ও মিনি ট্রাকে করে বিভিন্ন ইটভাটা নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি ডাম্পার গাড়ি ও মিনি ট্রাক প্রতি ১৫০০-২০০০ টাকা করে নিচ্ছে তারা। এতে একদিকে সরকারি টাকায় নির্মাণ করা নদীর বাঁধ ধ্বংস হচ্ছে। অন্যদিকে কোটি টাকার মাটি বিক্রি করে নেতাদের পকেট ভারী হচ্ছে। ডাম্পার গাড়িতে মাটি বোঝাই করে নিয়ে যাওয়ার কারণে ক্ষতি হচ্ছে সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তা। ডাম্পার থেকে রাস্তার ওপর মাটি পড়ার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। যদিও রাস্তা পাকা কিন্তু একটু বৃষ্টি হলেই কাদা হয়ে এলাকাবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রোদ হলে ধূলো আর বৃষ্টি হলে কাদায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়তে হয় এলাকাবাসীর। তাছাড়া নদীর দুই পাড়ের মানুষ ভুগছেন প্লাবন আতঙ্কে। অন্যদিকে রাত ৯ টা থেকে ভোর পর্যন্ত চলা মাটি চুরির অভিযানে সৃষ্ট ডাম্পার ও ভেকু মেশিনের শব্দে রাতে স্থানীয়রা ঘুমাতে পারেন না। সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা এলাকায় কিছু প্রভাবশালী নেতাদের নেতৃত্বে এমন নদী খনন কাজ করা হচ্ছে। নদী খনন করে মাটি দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। কিন্তু সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা এলাকার কিছু সচেতনমহল ও স্থানীয়রা বাধা দেওয়ায় তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয় প্রভাবশালী নেতারা। বেড়িবাঁধ কেটে মাটি বিক্রি করায় বেড়িবাঁধ সরু হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার সুজিত রায় জানান, ‘ডাম্পার গাড়িতে করে ওই মাটি বহনের সময় ঝাউডাঙ্গা হরিতলা মন্দিরের পাচিল ভেঙ্গে যায় এতে করে সংখ্যালঘুরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া বেত্রাবতীর নদী থেকে মাটি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় জলাশয় ভরাট করছেন কিছু ব্যক্তি, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এভাবে মাটিকাটা চলতে থাকলে বেত্রাবতী নদীর খননকাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। ‘ তিনি আরো বলেন, ‘আমার নিজ রেকর্ডিয় সম্পত্তির গাঁ ঘেঁষে পুরাতন বাঁধের মাটি কাটায় সামনের বর্ষা মৌসুমে আমার বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে মাটি নিচ্ছেন স্থানীয় সাবেক মেম্বার শরিফুজ্জামান ময়না ও মুজিবুর রহমান নামে দুই ব্যক্তি। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, নদী খননের মাটি রাখার জায়গা না পাওয়ায় আমরা অন্য জায়গায় বিক্রি করে দিচ্ছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা এলাকার আরো অনেকে বলেন, বেত্রাবতী নদীর খনন কাজ এখনো শেষ হয়নি। এভাবে বেড়িবাঁধের মাটি সরিয়ে নিলে খনন কাজ শেষে পানি ছেড়ে দিলে পুরো সাতক্ষীরা জেলা পানিতে ভেসে যাবে। তাছাড়া ভেসে যাবে ঝাউডাঙ্গা, হাচিমপুর, রাজবাড়ী, পাথরঘাটা, হাজিপুর, নারায়ণপুর, বল্লীসহ অনেক এলাকা। সরকারের কোটি কোটি টাকার এ প্রকল্প এলাকাবাসীর কোনো উপকারে আসবে না বলে মন্তব্য করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী-২ এর নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
রাস্তার বিষয়ে সাতক্ষীরা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সুজায়াত হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমি জানতাম না, তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ঝাউডাঙ্গার স্থানীয় জনগণ।