
নিজস্ব প্রতিবেদক: হুমকি দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঝাউডাঙ্গায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল প্রতীকের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মিমাংসা করে দিয়েছে পুলিশ। হামলার ঘটনাটি গত ২৫ডিসেম্বর সোমবার ৫টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ঘটে।
হামলার শিকার অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন, প্রভাষক আশরাফুল ইসলাম, ইউপি সদস্য আজাদ হোসেন, ইউপি সদস্য আলি বক্স, আব্দুর রাজ্জাক এই প্রতিবেদককে জানান, গত ২৪ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা বাজারে লাঙ্গল প্রতীকের এ নির্বাচনী জনসভা থেকে ঈগলের সমর্থকদের প্রকাশ্যে হুমকি দেয় জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও সাবেক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক মিজানুর রহমান। এ জনসভার ২৪ ঘন্টা পর গত ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গোবিন্দকাটি গ্রামের মতিয়ার শেখের ছেলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী মিলন শেখ ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। কার্যালয়ে উপস্থিত থাকা ঈগল প্রতীকের সমর্থক ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেতা অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক প্রভাষক আশরাফুল ইসলাম, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য আজাদ হোসেন, ইউপি সদস্য আলি বক্স, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান আব্দুর রাজ্জাককে হুমকি দিয়ে মিলন বলে, ‘এটি মহাজোটের অফিস। এখান থেকে বেরিয়ে যা।’ এর পাঁচ মিনিটের মাথায় লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থক ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেকের নেতৃত্বে ৫-৭জন লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে প্রবেশ করে। সেখানে উপস্থিত সকলকে এই বলে হুমকি দেয় যে, ‘এখান থেকে বের হবি, না মার খাবি।’ সাথে সাথে তারা অমরেন্দ্র নাথ ঘোষ ও সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনসহ উপস্থিত অন্যান্যদেরকে জামার কলার ধরে টেনে হিঁচড়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অফিস থেকে বের করে দেয়। তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে। তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাটি আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর নজরে গেলে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি তদন্ত নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি পুলিশ দল ঘটনাস্থলে যায়। সাংবাদিক ইয়রাব হোসেনের ওপর হামলার খবর শুনে দৈনিক সাতনদী পত্রিকার সম্পাদক হাবিবুর রহমানসহ একদল সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাদের এবং পুলিশের উপস্থিতিতেই হামলাকারীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে লাঙ্গল প্রতীকের সমর্থক ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক ও নৈশ প্রহরী মিলন শেখকে আটক করে নিয়ে আসে পুলিশ। ভুক্তভোগী ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অমরেন্দ্র নাথ ও যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবলুকে থানায় এসে এজাহার দিতে বলা হয়। পরে অমরেন্দ্র নাথ, আশরাফুল ইসলাম বাবলু ও ইয়ারব হোসেন থানায় আসে। হামলার শিকার ভুক্তভোগীদের থানায় আসার খবর পেয়ে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান আশু, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও সাবেক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ ও জেলা যুবলীগের আহবায়ক মিজানুর রহমান দলবল নিয়ে থানায় আসে। তারা ভুক্তভোগীদের এজাহার না দেওয়ার জন্য পীড়াপিড়ি করে। একপর্যায়ে থানা পুলিশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি মিমাংসার জন্য ভুক্তভোগীদের অনুরোধ করা হয়। অমরেন্দ্র নাথ ও আশরাফুল ইসলাম বাবলুর কাছে মাফ চেয়ে ও মুচলেকা দেওয়ার শর্তে মিমাংসা করে ওই রাতেই তাদের বিদায় করা হয়। কিন্তু বেঁকে বসে মানজমিনের সাংবাদিক ইয়ারব হোসেন। তিনি মিমাংসায় রাজি না হয়ে রাত ১টায় থানায় এজাহার দায়ের করেন। ফলে ওই রাতে আটককৃত আব্দুল খালেক ও মিলন শেখকে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন পক্ষের অনুরোধে ইয়ারব হোসেন পরের দিন সকাল ১১টায় থানায় আসে। থানা পুলিশসহ লাঙ্গল প্রতীকের শীর্ষ ব্যক্তিদের অনুরোধে মুচলেকা দেওয়ার শর্তে বিষয়টি মিমাংসায় ইয়ারব হোসেন রাজি হতে বাধ্য হয়। পরে থানার ওসি ওপারেশন জাহাঙ্গীর হোসেন শর্তযুক্ত মুচলেকা লিখে তাতে আব্দুল খালেক ও মিলন শেখের স্বাক্ষর নেয়। সেখানে কয়েকজনকে স্বাক্ষীও রাখা হয়। এরপর আটককৃত দুইজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঝাউডাঙ্গার এ ঘটনার পর সাতক্ষীরা ২ আসনজুড়ে ঈগলের বিরোধী শিবিরের মারমুখী কর্মীরা পিছু হটেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিদুল ইসলাম জানান, ‘শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে দুপক্ষের সম্মতিতে বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।’