
জিহাদ ‘জহদ’ শব্দ থেকে আগত। এর অর্থ-
* যথাসাধ্য চেষ্টা করা
* সাধনা করা
* চুড়ান্ত প্রচেষ্টা চালানো।
‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ ইসলামের একটি মৌলিক পরিভাষা। এর অর্থ আল্লাহর দীনের জন্য ছোট থেকে বড় সকল ধরনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। আল্লাহর দীনের দাওয়াত সর্বক্ষেত্রে সম্প্রসারিত। জিহাদকে পবিত্র কুরআন এর ভাষায় ‘সর্বোত্তম তিজারত ‘(ব্যবসা) ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, “হে ঈমানদারগণ!তোমাদেরকে কি এমন একটি ব্যবসার কথা বলব না? যে ব্যবসা জাহান্নামের পীড়াদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে।আর তা হলো তোমরা আল্লাহর ও তাঁর রাসুলের উপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা (লড়াই) করবে তোমাদের সম্পদ এবং জীবন দিয়ে। ইহাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝতে পারো।”(সূরা সফঃআয়াত ১০-১৩)
জিহাদ ও রমজান ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রমজান যেমনি মহাগ্রহ্ন পবিত্র আল কুরআন নাযিলের মাস,তেমনি রমজান বিজয়েরও মাস।ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য এ রমজান মাসেই গুরুত্বপূর্ণ জিহাদগুলো সংঘটিত হয়েছে।
এ মাসে মুসলমানদের যত বিজয় অর্জিত হয়েছে আর কোনো মাসে এককভাবে তা হয়নি।রাসুল সাঃ এর জীবদ্দশাতেই পবিত্র রমজান মাসে ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বিজয় অর্জিত হয়।
* প্রথমটি বদরের যুদ্ধ
* দ্বিতীয়টি মক্কা বিজয়।
বদরের যুদ্ধ:
♦১৭ই রমজান মুসলিম জাতির জীবনে এক স্মরণীয় দিন।কারন এ দিনের ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় ঘটনা মুসলমানদের জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল। এ ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে P.K.Hitte বলেন, ” The battle of Badr laid the foundation of Mohammad temporal power Islam had Won its first and decisive military victory. “
★ ২য় হিজরির ১৭ই রমজানে ইসলামের প্রথম পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বদরের প্রান্তরে অনুষ্ঠিত হয়।এতে স্বল্পসংখ্যক ঈমানদারগণ তুচ্ছ অস্ত্র নিয়ে ত্রিগুণ বাহিনী ও সুবিশাল অস্ত্র সম্ভার সজ্জিত কাফিরদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেন।
বদরের যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এ যুদ্ধে ইসলাম ও পৌত্তলিকতার চরম পরীক্ষা হয়ে যায়।অসেত্যর উপর সত্যের জয় হয়।ফলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে,ইসলাম আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবন বিধান।
বদরের যুদ্ধ ছিল মুসলমানদের জন্য চরম এক অগ্নিপরীক্ষা। এটা সকল সময়ের জন্য ইসলামের ভাগ্য নির্ধারন করেছিল। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক R.A.Nicholson বলেন, “Badr,like marathon is one of the greatest and most memorable battles in all history. “
এ যুদ্ধ সম্পর্কে ঐতিহাসিক P.K.Hitte বলেন, “Islam recovered and passed on gradually from the defensive to the offensive.”
অর্থাৎ, ইসলাম পুনরুজ্জীবন লাভ করল,আত্মরক্ষার পরিবর্তেআক্রমণাত্মক নীতি অবলম্ববন করল।
মক্কা বিজয়:
★ ৮ম হিজরির ২০ রমজান মহানবী সাঃ এর হাত ধরে মক্কা বিজিত হয়।বদর থেকে বিজয়ের যে ধারা শুরু হয় তা মক্কা বিজয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।এর পর গোটা আরবে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে পড়ে। এবং ইসলাম এক অপ্রতিরোধ্য শক্তিতে পরিণত হয়।এ বিজয় সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক বলেন, “আমরা আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।” (সূরা ফাতহ, আয়াত ঃ ১)
♦এছাড়াও মুসলমানদের জাতীয় জীবনে পবিত্র রমজান মাসে আরো অনেক অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জিত হয়েছে।
★১৫ হিজরির ১৩ ই রমজান খলিফা হযরত উমর রাঃ এর সময় আমর বিন আস জেরুজালেম ও মসজিদুল আকসা জয় করেন।
★১৫ হিজরির রমজান মাসেই কাদেসিয়ার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী পারস্য জয় করেন।
★৬৯ হিজরির রমজান মাসেই মুসলিম বীর মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে অত্যাচারী সিন্ধু রাজা ‘ দাহির ‘ পরাজিত হয়।
★৯২ হিজরির রমজান মাসেই তারিক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে স্পেন বিজয় হয়।
★২১২ হিজরির রমজান মাসেই যিয়াদ বিন আগলাবের নেতৃত্বে ইটালীর সিসিলি দ্বীপ বিজয় হয়।
★৫৩২ হিজরির রমজান মাসে এমাদুদ্দীন জঙ্গির নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী উত্তর সিরিয়ার হাবল শহর জয় করেন এবং খ্রিষ্টান ক্রুসেডারকে পরাজিত করেন
পরিশেষে বলা যায়,পবিত্র রমজান মাস মুসলমানদের জীবনে রহমত, বরকত,মাগফিরাত, নাজাত ও বিজয়ের বার্তা নিয়ে আসে।

( লেখক: মোস্তফা আব্দুল্যাহ আল মামুন, সহঃঅধ্যাপক, হাজী কেয়ামউদ্দীন মেমোরিয়াল মহিলা কলেজ।)