
হাফিজুর রহমান, কালিগঞ্জ থেকে: তৃতীয় ধাপে আগামী ২৮ নভেম্বর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের হাট, বাজার, মহল্লায়, হোটেল, রেস্তোরা, চায়ের দোকান, অলিতে গলিতে চেয়ারম্যান, মেম্বর প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে চলছে তর্ক, বিতর্ক, যুক্তি, পাল্টা যুক্তি এবং প্রার্থী মূল্যায়ন সম্পর্কে চুল চেরা বিশ্লেষন। আর এ নির্বাচনের প্রচারনাকে কেন্দ্র করে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যে জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। পোষ্টার ব্যানারে ছেয়ে গেছে ইউনিয়ন গুলোর হাট, বাজার, রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি সর্বত্রেই। প্রচার প্রচারনা ও পথসভা উঠান বৈঠক এবং মাইকের আওয়াজে মুখরিত ১২টি ইউনিয়ন। গত ১১ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদরের ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩জন নৌকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করে, বাকী সতন্ত্র, বিদ্রোহী, জামায়াত এবং বিএনপির প্রার্থীরা পাশ করে। আর এই ফলাফলের প্রভাব এখন কালিগঞ্জ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিস্তার লাভ করেছে। তাতে করে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোট হবে এমন আশায় বিএনপি জামায়াতের প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে বাধা থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠ কাপাচ্ছে। ভাড়াশিমলা ইউনিয়নে এক সময়কার জামায়াত বিএনপি ঘরানার নাজমুল ইসলাম নাঈম এক প্রভাবশালী নেতার ছত্র ছায়ায় হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসে থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের পথ বাগিয়ে নেয়। বর্তমানে এ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে দলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ালেও তার প্রতি দল কোনো বহিষ্কার বা শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নৌকার প্রার্থী কোনাঠাসা হয়ে পড়েছে। অনুরূপ তারালী ইউনিয়নে সাতক্ষীরা ডে-নাইট কলেজের অধ্যক্ষ এ,কে,এম শফিকুজ্জামান খোকন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়ায় বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে নৌকার প্রার্থী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোটোর সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহ-সভাপতি প্রশান্ত সরকার এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়নে সংখ্যালঘুদের ভোট দ্বিধা বিভক্ত করে মাঠ চষে বেড়ালেও তাকে দল কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এদিকে দলীয় প্রতীক নিয়ে দক্ষিনশ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গোবিন্দ মন্ডলের নৌকার ভরাডুবির আশাক্সকা করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। চাম্পাফুল ইউনিয়নে এক সময়কার বিএপি নেতা আব্দুল লতিফ মোড়ল ২০১৩ সালে সহিংসতার পরে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের সদস্য না হয়েও এ নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের থানা সভাপতি পরিচয়ে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারানোর জন্য মাঠ চষে বেড়ালেও দেখার কেউ নাই। অন্যদিকে চাম্পাফুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন নৌকা প্রতীক নিয়ে ছুটে বেড়ালেও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধা বিভক্তির কারনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ধলবাড়িয়া ইউনিয়নে বিগত ইউ.পি নির্বাচনে আলহাজ্ব গাজী শওকত হোসেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। এবার প্রথমে দলীয় প্রতীক নৌকা তাকে দেওয়া হয়। পরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বজল মুখার্জীর আপিলের কারনে তার নৌকা ফিরিয়ে নিয়ে স্বজল মুখার্জীকে দেওয়া হয়। নৌকা দেওয়া নেওয়া নিয়ে এখানে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। তবে এখানে শেষ হাসিটা স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী শওকত হোসেন হাসবেন এমনি ধারনা দলীয় নেতাকর্মীদের। বর্তমান কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের কারনে ১২টি ইউনিয়ন পরিষদে তেমন কোনো দলীয় নেতা বা প্রার্থী তৈরি হয়নি। যেকারনে অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে তৃনমূল আওয়ামী লীগের মতামতকে প্রাধান্য না দেওয়ায় অধিকাংশ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকার প্রার্থী পরাজয় বরণ করবে এতে কোনো সন্দেহ নয়। আর আওয়ামী লীগের এই পরিস্থিতি দেখে বর্তমান জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মী সমর্থকরা খোলস পাল্টে তারা আওয়ামী লীগকে ভরাডুবি করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত শুধুমাত্র থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী ও দলীয় নৌকা প্রার্থী এনামুল হোসেন ছোটোর তারালী ইউনিয়ন থেকে নাম মাত্র দুইজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকে বহিষ্কার ছাড়া এখনো পর্যন্ত আর কোনো বিদ্রোহী নেতাকর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় দল এবং প্রার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এবিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক সহ নেতৃবৃন্দকে আশু হস্তক্ষেপ নিতে বলেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তা নাহলে আগামী ২৮ নভেম্বর নির্বাচনে ২/১ জন প্রার্থী ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রায় অধিকাংশ প্রার্থী যে ভরাডুবি হবে এমনি আশাঙ্খা করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ ভোটাররা। বিগত নির্বাচনে যেভাবে দলীয় প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলো অনেকেরই ধারনা দলীয় প্রতীক পেলে এবারও চেয়ারম্যান হওয়া যাবে কিন্তু সে স্বপ্ন মনে হয় শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।