
ইয়ারব হোসেন: অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে কলারোয়ায়ায় দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মানের অভিযোগ উঠেছে। নির্মান কাজে পুকুরের বালু, দুই নম্বর ইট ও সিমেন্টের মিশ্রনে ফাঁকি দিয়ে সরকারি অর্থ লোপাট করা হচ্ছে বলে উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন বরাদ্ধ পাওয়া নির্মানাধীন বাস গৃহের মালিকরা।
কলারোয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানা গেছে, উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের ক্ষেত্রপাড়া গ্রামে দূর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মান প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি বাসগৃহের জন্য সরকার ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা বরাদ্ধ করে। নিয়ম অনুযায়ী ১ নং ইট দিয়ে নির্মান কাজ করার কথা। এজন্য সংশ্লিষ্ট বাস গৃহের জন্য একজনকে সভাপতি ও এক জনকে সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদারকি কমিটিও করা হয়। বরাদ্ধকৃত অর্থে একটি রান্নঘর বিশিষ্ট দুই রুম ও আলাদা বাথ রুম নির্মান করা হবে।
সরেজমিনে গতকাল ক্ষেত্রপাড়া গ্রামের কানাই দাশের ছেলে নেপাল দাশ জানান, তিনি গরীব মানুষ। তার থাকার মতো বড়িঘর নেই। সম্প্রতি সরকার তার নামে একটি বাসগৃহ বরাদ্ধ করে। ঘর নির্মানের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে রেজুলেশনের মাধ্যমে একটি কমিটিও করা হয়। বাস গৃহ নির্মানের ওই কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ছামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবু। কোন আলেচনা ছাড়াই গত ১০ দিন আগে তার তিন শতক জমির উপর ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বর জয়দেব সাহা বাসগৃহ নির্মান করার কাজ শুরু করে। বাসগৃহ নির্মানে ভিতের মাটি না খুড়ে আলগা মাটির উপর পুকুরের বালুর সাথে সিমেন্ট মিশিয়ে দুই নম্বর ইট দিয়ে কাজ শুরু করে। নিয়ম বর্হিভূত কাজ করতে নিশেধ করলে ঘরের টাকা ফিরে যাবে বলে হুমকি দেয়। এসময় সে প্রতি বস্তা সিমেন্টের সাথে ১৬ ঝুড়ি বালু মিশিয়ে কাজ করতে থাকলে উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তার দপ্তারে যেয়ে মৌখিক অভিযোগ দিই। বাস গৃহ নির্মানে সরকারের প্রায় তিন লাখ টাকা বরাদ্ধের অর্ধেকের বেশী টাকা দূর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত করার জন্য ইউপি সদস্য জয়দেব সাহা কোন নিয়ম মানেনি।
খোজ নিয়ে একই গ্রামের মৃত তকব্বর গাজীর স্ত্রী ফেরদৌসির নামে বরাদ্ধকৃত বাস গৃহ নির্মনেও অনিয়ম চোখে পড়ে। উঠানের মাটি খুড়ে ভিত তৈরী করা হয়নি। ১৫ ইঞ্চি বেজ ও ১০ ইঞ্চি ভিতের উচ্চতা, সিমেন্ট ও বালুর ব্যবহার করা হয়েছে বরাদ্ধ পাওয়া বাড়ির মালিককে না জানিয়ে ইচ্ছেমতো। সরকারি অর্থ লোপাটের জন্য তড়ি ঘড়ি করে কাঠের বদলে স্বল্প মূল্যের টিনের দরজা জানালা লাগানোর কাজ চলছে।
প্রকল্প কমিটির সম্পাদক সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর জাহানারা খাতুন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান নেপাল দাশের বাসগৃহ নির্মান কমিটির সভাপতি। তার অনুপস্থিতে ইউপি সদস্য জয়দেব সাহা দূর্নীতির মাধ্যমে সরকারি টাকা লোপাটের জন্য মনগড়া কমিটি করে কাজ শুরু করেছে। তিনি কমিটির সেক্রেটারী হলেও তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান ছামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবু মুঠোফোনে জানান, তিনি ছুটিতে কয়েকদিন এলাকার বাইরে অবস্থান করছেন। সপ্তাহ খানেক পর বাস গৃহ নির্মানের কাজটি স্বচ্ছতার সাথে তিনি করতে চেয়েছিলেন। এলাকায় না থাকার সুযোগে সরকারি অর্থ লুটপাট করার জন্য ইউপি সদস্য জয়দেব সাহা রাত দিন শ্রমিক লাগিয়ে যেন তেন ভাবে কাজ সম্পাদন করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি তিনি ইউএনওকে জানিয়েছেন।
এবিষয়ে ইউপি সদস্য জয়দেব সাহা জানান, নিয়ম মেনেই বাস গৃহ নির্মানের কাজ করা হচ্ছে। সরকারী কাজে একটু এদিক ওদিক হয়েই থাকে। সব দিকে খেয়াল করলে কাজ করা যায় না। তাছাড়া ঘর নির্মান কাজের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান হলেও তিনি দেশের বাইরে। তিনি নতুন কমিটি গঠন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম শাহ নেওয়াজ বলেন, নির্মান কাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে নেপাল দাশ নামের একজন মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেছেন। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন। এ ছাড়া গৃহনির্মান কাজের গঠিক কমিটির বাইরে কেউ অনিয়ম করে কাজ করলে বরাদ্ধকৃত টাকা ছাড় করা হবে না। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের টাকা হরিলুট করে উন্নয়ন কাজে বাধা সৃষ্টি করীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।