
সচ্চিদানন্দদেসদয়, আশাশুনি থেকে:
আশাশুনির চাপড়ার মরিচ্চাপ নদীর মুখ থেকে বুধহাটা, গুনাকরকাটি ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতনা নদীর অধিকাংশ এলাকা দখল হয়ে গেছে। বিভিন্ন বাজার এলাকায় নদীর উপর তৈরি করা হয়েছে দোকান। আবার অনেক এলাকায় নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। তৈরি করা হয়েছে পুকুর। নদী কখনও ব্যক্তিগত জমি না হলেও স্থানীয় ভূমি অফিস ও এ্যাসিল্যান্ড অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজশে তা ব্যক্তিগত জমি হিসাবে কারও কারও নামে লিখে দেয়া হয়েছে। এমন কি নদীর মধ্যেস্থান ও প্রভাবশালীদের নামে ডিসিআর দেওয়া হচ্ছে।
সে সব জায়গায় ব্যক্তিগত ঘরবাড়ী, মৎস্য ঘের, বালু ভুমি গড়ে তুলেছে। মানছে না সরকারি ব্রীজ কালভার্ট এর মত স্থাপনা গুলোও। ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আশাশুনির কয়েকটি বড় বড় বিলের পানি বের হতে পারে না এই নদী দিয়ে। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। বিগত কয়েক বছর আগে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময় প্রশাসন বেতনা নদীর দখল হয়ে যাওয়া অংশ উদ্ধারে তৎপর হলেও পরে তা আবার দখল হয়ে গেছে। কিছু স্বার্থন্মেষী মানুষ, কিছু দুর্নীতিপরায়ন কর্মচারীর অর্থলোভের কারনে বেতনা আজ মৃত।
বেতনা ভৈরবে নদের একটি শাখা। যশোর জেলার নাভারন বাঁগআচড়ার উপর দিয়ে প্র্রথমে কলারোয়া উপজেলার ইলিশপুর ভিখালীতে প্রবেশ করেছে।তারপর শাকদহ, পানিকাউরিয়া, সাতক্ষীরা উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, আগড়াখোলা, বিনেরপোতা, মাছখোলা হয়ে বুধহাটা গাঙ নামে পরিচিত হয়ে দক্ষিণে কেয়ারগাতি মরিচ্চাপের সাথে মানিকখালিতে মিলিত হয়েছে। এখান থেকে একশাখা পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বড়দলের উপরদিয়ে কপোতাক্ষ পড়েছে এবং অন্যশাখা দক্ষিণ দিকে খোলপেটুয়া র সাথে মিশেছে।
বৃটিশ নাগরিকের তৈরি ম্যাপে ছিল বেতনা প্রমত্তা নদী। মূলত মাথাভাঙ্গা-ইছামতি পশ্চিমে আর পূর্বে কপোতাক্ষী, এই দুই দণিক্ষগামী নদীর সমান্তরালে বেতনা এক সময় বিস্তৃর্ণ ভূ-ভাগকে সতেজ সবুজ উর্বর ভূমিতে পরিণত হতে সাহায্য করেছিল। পদ্মা থেকে মাথাভাঙ্গা-ইছামতির উৎপত্তি। তা থেকে লোয়ার ভৈরব এবং কপোতাক্ষী আর কপোতাক্ষীর শাখা হল বেতনা।
আর বেতনা মরতে শুরু করেছে বল প্রয়োগে নদী দখল এর কারনে। সেখানে বসতি স্থাপন, পুকুর খনন, মৎস্যঘের, ইট ভাটাস্থাপন, বালু মহল তৈরি করার প্রভৃতি অবিবেচক কাজ করার কারনে।
আশাশুনির উপজেলার ভিতর বেতনা নদীর সবচেয়ে চন্ডীতলা, নওয়া পাড়া, বুধহাটা, গুনাকর কাটি, পুটেমারি বাহাদুর পুর এলাকা দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। নদীর এই সব অংশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব এলাকায় নিজের মতো দখল করে বড় বড় পুকুর, কোথাও দীঘি তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া বুধহাটা বাজার এলাকায় নদী দখল করে তৈরি করা হয়েছে বিল্ডিং। বাহাদুরপুর পাড়ে তৈরি করা হয়েছে চাষী জমি, ঘের, বুধহাটার চন্ডী তলা, থেকে শুরু করে পুটেমারি ধার পর্যন্ত মৎস্যঘের, সরদার ব্রিকিস, বুধহাটা বিক্রিস, হাজী ব্রিকিস গড়ে উঠেছে।
এসব ইট ভাটায় নামে বেনামে ডিসিআর নিয়ে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। আর এ কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তহশীল দাররা ও এ্যাসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেযার তৃতীয় শ্রেনির কর্মচারিরা সহযোগিতা করছে। সংকীর্ন বেতনার দু’ধার দখল নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে কে আগে দখল নিতে পারে। একটু চর জাগলেই রাতারাতি সেখানে মৎস্য ঘের অথবা খেলার মাঠ নতুবা দালান ঘর উঠে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নদীর পাড়ের অধিকাংশ জমি, কোন কোন এলাকায় পুরো নদী দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। তারা ভুয়া কাগজপত্রও তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করেছে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কতিপয় কর্মকর্তা। বেতনা নদী দখল হলে প্রসাশনের পক্ষ থেকে এখনও উচ্চেদের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।